ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের একমাত্র লক্ষ্য এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হটানো। নিজের মুখেই তিনি এই কথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন এই মুখ্যমন্ত্রী। এবার একমাত্র লক্ষ্য দেশ থেকে মোদি সরকারের পতন।
Advertisement
মোদি সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে পুরো দেশের যেসব রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় নেই সেগুলোকে নিয়ে একটি ইউনিয়ন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তার। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে বিজেপি সরকার। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সবকিছুতেই চরম দুর্দশা। একটি ইউনিয়ন তৈরি করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একত্রে লড়াই করতে হবে রাজ্যগুলোকে।’
এবার বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির ক্ষমতা দখলের লড়াইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছে তৃণমূল। আর তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন তিনি।
Advertisement
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন দিল্লি সীমানায় চলা কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত। এই আন্দোলনকে প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল। সংসদীয় দলও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেছিল। কৃষক বিরোধী কৃষি আইন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টিকায়েতের কথা হয়েছে। পরে টিকায়েত মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মমতা বিজেপির হাত থেকে বাংলাকে বাঁচিয়েছেন, এবার দেশকে বাঁচাতে হবে।’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের দাবিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলনের পাশে থাকব। মোদি সরকারকে হটানোই এখন লক্ষ্য। এজন্য বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। জোট বেঁধে কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
তবে এবারই প্রথম নয়। ২০১৯ সালে লোকসভার আগেও বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী। ব্রিগেডে সব বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ব়্যালি’ও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভোটের ফলে সেই জোট নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়।
একই সঙ্গে মমতার কৌশলী বার্তা, ‘যারা বিজেপির পুরনো লোক আছেন। যারা পুরনো ঘরানার মানুষ। আর যে যুবক-নেতারা মোদিকে দেখে চলে গিয়েছেন। তাদের ফিরে এসে একাট্টা হয়ে হিন্দুস্তানকে বাঁচাতে, কৃষকদের বাঁচাতে, যুবকদের বাঁচাতে, শ্রমিকদের বাঁচানোর আবেদন থাকল আমার।’
Advertisement
কোন শক্তিতে ভারত থেকে ফের মোদিকে উৎখাতের স্বপ্ন দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একুশের বিধানসভার জয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ তোলে গেরুয়া নেতৃত্ব। হিড়িক পড়ে যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানোর। কিন্তু ভোটের ফলে ধরাশায়ী হয় বিজেপি। প্রচারে দু’শো আসন জয়ের দাবি করলেও বাস্তবে একশর গণ্ডি ছুঁতে পারেনি দিলীপ-শুভেন্দুরা। উল্টোদিকে সব বুথ ফেরত সমীক্ষাকে তুচ্ছ করে ২শ’র বেশি আসনে জয় পায় তৃণমূল।
এবারের নির্বাচন ছিল কার্যত মমতা বনাম মোদি। তাতেই সাফল্য পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার নেতৃত্বে এই চমকপ্রদ জয়ে মোদিসহ গোটা বিজেপি শিবিরকেই ধাক্কা দেয়া গিয়েছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
এদের অনেকেই আবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে মোদিকে হটাতে একমাত্র যোগ্য প্রতিপক্ষ হলেন মমতা। তাই কংগ্রেসের বহু শক্তিশালী নেতা থেকে বিরোধী নেতৃত্ব ২০২৪ সালের লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের পক্ষপাতি। বিরোধীদের এই অবস্থান অজানা নয় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীরও। তাই আর দেরি না করে এবার আলোচনার মাধ্যমে বিজেপি বিরোধী ‘ইউনিয়ান’ গঠনের ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
টিটিএন/জিকেএস