কৃষি ও প্রকৃতি

আইনজীবী শিপ্রা গোস্বামীর দৃষ্টিনন্দন ছাদ বাগান

শিপ্রা গোস্বামী। পেশায় আইনজীবী। ফরিদপুর শহরে তার বাড়ি। শিপ্রা দিদি নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। তিনি গাছপালা ভালোবাসেন খুব ছোটবেলা থেকেই। আইন পেশার পাশাপাশি জেনে নিয়ে ছিলেন ছাদ বাগানের নিয়ম-কানুন।

Advertisement

নিজের ছাদ বাগান এখন শিপ্রার সংসারেরই একটা অংশ। তার দুঃখ কষ্ট হতাশা ভুলে থাকার ম্যাজিক। একটি দিনও ওদের ছাড়া থাকার কথা ভাবতে পারেন না। যতদিন বাঁচবেন ততদিন সবুজের সমারোহেই বাঁচতে চান। তাই তিনি বাড়ির ছাদে সাধ মিটিয়ে নতুন নতুন গাছ লাগিয়েছেন। তার ফুল গাছের প্রতিই আকর্ষণ বেশি, বিশেষ করে শীতকালীন ফুল ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জাতের ফুল।

ঠিক কবে থেকে তা তিনি বলতে পারেন না। তার মনে পড়ে, একবার তাকে এক সহপাঠী ছোট্ট ডালসহ একটা গন্ধরাজ ফুল উপহার দিয়েছিল। বাসায় নিয়ে এসে একটা কাঁচের পুরানো ওষুধের বোতল ধুয়ে সেটিতে রেখেছিলেন। এক সময় ফুলটি শুকিয়ে গেলেও পাতাসহ ডালটি বেশ তরতাজা হয়েছিল।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখেন, গন্ধরাজের ডালে ছোট্ট দুটো নতুন পাতা উঁকি দিচ্ছে। এ যেন এক আবিষ্কার! আনন্দে নাচতে নাচতে পরিবারের সকলকে দেখিয়ে ছিলেন গাছটি। ক’দিন পর আরো কিছু পাতা গজালে একটা দইয়ের খুঁটিতে মাটি দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে গাছের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা শুরু।

Advertisement

শিপ্রা গোস্বামীর ছাদ বাগানে ২০০টিরও বেশি গাছ আছে। ফুলের মধ্যে জবা, বেলি, গোলাপ, এডেনিয়াম, কলাবতী, জুঁই, শিউলী, নাগচম্পা, অলকানন্দা, কামিনী, স্থলপদ্ম, পায়েনসেটিয়া, নয়নতারা, পর্তুলিকা, দোলনচাঁপা, টগর, অরেঞ্জ মার্মালেড, মেক্সিকান বাটারফ্লাই, অপরাজিতা, রঙ্গন, রাধাচূড়া, গন্ধরাজ, হাস্নাহেনা, কাঠগোলাপ, বাগান বিলাস, রুসেলিয়া ইত্যাদি।

ফলের মধ্যে, আম, লেবু, মাল্টা, বরই, কদবেল, কামরাঙা, পেয়ারা, সফেদা। এছাড়াও অল্প কিছু শাক-সবজিও আছে যেমন, বেগুন, মরিচ, বরবটি, শসা, লাল শাক, পুঁইশাক এবং কলমি শাক। এবার শীতে প্রচুর টমেটো, বাঁধাকপি, সীম আর বেগুন হয়েছে।

একবার চিকিৎসক স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। ছাদ বাগানের দায়িত্বটা একজনকে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তেমন গুরুত্ব দেননি। দেশে ফিরে দেখেন ৮০ভাগ গাছই মরে গেছে। খুব কেঁদেছিলেন সেসময়, খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মত করেননি।

অভিমান করে প্রায় ১ দশক গাছ থেকে দূরেই ছিলেন। ছাদেই যেতেন না, গাছও লাগাতেন না। অনেক টব ছিলো, তার থেকে কিছু অন্যদের দিয়ে দিয়েছিলেন, বাকিগুলো মাটি ফেলে দিয়ে উপুড় করে রেখেছেন। তিনি জানতেন ছাদ বাগান বা গাছ ছাড়া তিনি থাকতে পারবেন না।

Advertisement

আইনজীবী শিপ্রা গোস্বামী আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, হঠাৎই ২০১৭ সালে মধু কবির বাড়িসহ দর্শনীয় কিছু জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর গেলাম ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালীতে। আমার সাথে অনেকেই নানা রকম ফুলের চারা কিনলো। সুন্দর সেই গাছগুলো দেখে আমিও সব অভিমান জলাঞ্জলি দিয়ে কয়েকটা গোলাপ আর একটা শ্বেত জবা কিনে আনলাম। আবার শুরু হলো আমার ছাদ বাগান। ক্রমেই কলেবর বাড়তে লাগল। বাড়িতে থাকলে সকাল এবং সন্ধ্যেটা ওদের জন্যেই বরাদ্দ থাকে।

তিনি আরও জানান, করোনাকালে হতাশাগ্রস্থ না হয়ে বাগানের প্রতি আরো মনযোগী হয়েছি। গাছের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু ফুল নয়, করছি ফল এবং সবজিও। আমি ঘুম থেকে উঠে বাগানে যাই, বাগান দেখে ঘুমাতে যাই আর স্বপ্নেও ওদের দেখি। কোনো গাছের একটি ডাল ভেঙে গেলে মনে হয় আমিই ব্যাথা পেলাম।

আমি যখন বাগানে যাই তখন আমার উদ্ভিদ সন্তানেরা আনন্দে নেচে উঠে। কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দিলে খিল খিল করে হাসে। ওরা যে আমায় প্রবল ভালোবাসে তা টের পাই আমি যখন ফরিদপুরের বাইরে যাই। ফেরার পর দেখি পুরো বাগানটা শ্রীহীন হয়ে পড়ে। ওরা এমনভাবে মলিন হয়ে যায় যেন মাতৃহীন শিশু। ওদের মান ভাঙিয়ে দুদিনের যত্নেই আবার সব আগের মত হয়ে যায়।

এন কে বি নয়ন/এমএমএফ/এমকেএইচ