‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি? এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে? সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে? তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে; অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি। রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?’
Advertisement
এভাবেই ফররুখ আহমদের কবিতায় অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই কবি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ হিসেবে পরিচিতি।
বিংশ শতাব্দীর এই কবি ছিলেন ইসলামি ভাবধারার বাহক। ১৯১৮ সালের এই দিনে (১০ জুন) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে জন্ম নেন কবি ফররুখ আহমেদ। কবির পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ হাতেম আলীর বসত বাড়ি ওটি। এখানেই তার পূর্ব পুরুষদের আদিবাস। কাঠ ও টিন দিয়ে নির্মিত সেই ঘরে কবির অনেক স্মৃতি।
আজ কবির স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটা ও জন্ম নিয়েছিলেন যে ঘরে সেই ঘরের দরজায় পড়েছে লাল কালির একটি তীর চিহ্ন। গত ২৮ মে কবির এই জন্ম ভিটার তিন পাশে তিনটি লাল নিশান পুঁতে দেয়া হয়েছে। চিহ্ন দেয়া হয়েছে কবির বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ হাতেম আলী এবং কবি মায়ের কবরের পাশেও। এদিকে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই ঘরটিসহ কবির স্মৃতি রক্ষার জন্য পরিবারের সদস্যরা আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরে। আশ্বাসও মিলেছে ইতোমধ্যে।
Advertisement
কবির স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘরটির আশপাশে লাল দাগ দিয়ে গেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাড়ির ওপর দিয়ে যাবে রেললাইন। এই রেললাইনটি ফরিদপুরের মধুখালী হতে কামারখালী হয়ে মধুমতী নদীর ওপর দিয়ে মাগুরা পর্যন্ত যাবে।
এরপর কবির ভাতিজি দিলরুবা পরিবারের পক্ষ থেকে মাগুরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন।
ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মাগুরা জেলায় রেললাইন স্থাপন ও কয়েক জায়গায় রেলস্টেশন নির্মাণের জন্য সরকার কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। সম্প্রতি কবি ফররুখ আহমদের বসতবাড়ির ওপর রেললাইন সংযোগের জন্য সরকার কর্তৃক মাপজোখ করা হয়েছে।
কবির ভাতিজি দিলরুব বলেন, দেশের বহু স্থানে রেললাইন থাকলেও মাগুরাবাসী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। মাগুরাবাসী স্বপ্ন দেখত মাগুরার ওপর দিয়ে ট্রেন যাবে রাজধানীতে। মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরের প্রচেষ্টায় মাগুরাবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। কিন্তু আমাদের ও এলাকাবাসীর দাবি কবির বসতবাড়ি অক্ষত রেখে রেললাইন তৈরি করার জন্য, যাতে কবির শেষ স্মৃতি চিহ্ন টুকু মাগুরা থেকে হারিয়ে না যায়।
Advertisement
এদিকে মাগুরার রেলওয়ের ওই প্রকল্পের পরিচালক আসাদুল হক বলেছেন, কবির বাড়ির ওপর দিয়ে নয়, বাড়ির পাশ দিয়ে রেললাইন যাচ্ছে। আর তা ফ্লাইওভার করে নেয়া হচ্ছে। এতে বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, বাড়ির যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্যই ফ্লাইওভার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. আফাজ উদ্দিন বলেছেন, ওই প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কথা হয়েছে। বাড়ির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ওই বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভার করে নেয়া হলে কবির বসতঘরের কোনোই ক্ষতি হবে না।
তবে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গেলেও তাতে কবির বসতবাড়িটি আর আগের মতো থাকবে না। অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কবি পরিবারের সদস্যরা।
আরাফাত হোসেন/জেডএইচ/এমকেএইচ