২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন না দেয়ায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পাশাপাশি প্রতিবেদন আকারে জেন্ডার বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মসূচিতে নারীর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের নীতি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
বুধবার (৯ জুন) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘বাজেট পরবর্তী ’ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী জেন্ডার বাজেট বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে বলেন, ২০২০-এ কোভিড পরিস্থিতির পর আর জেন্ডার বাজেট প্রকাশিত হয়নি। এ বছরেও প্রণয়ন করা হবে ভাবলেও দেয়া হয়নি। এ কারণে নারীর জন্য প্রকল্পগুলো থেকে কী সুবিধা পাওয়া যাবে এটা এখন আর জানা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি এ সময় প্রস্তাবিত বাজেটের চূড়ান্ত প্রকাশের সময় জেন্ডার বাজেট প্রকাশের জোর দাবি জানান।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, বাজেটে থাকা বরাদ্দ যাতে নারীর অধিকতর কল্যাণের জন্য ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য থাকা বরাদ্দ এবার কমেছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, যেটুকু বরাদ্দ হচ্ছে তা ঠিকমত খরচ হচ্ছে কি-না, এডলসেন্ট ফ্রেন্ডলি কর্নারে যে সেবা দেয়ার কথা তা হচ্ছে কি-না, কী কী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে এর গুণগতমান যাচাই করতে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। স্টিমুলাস প্যাকেজে গতবছর ৫ শতাংশ নারীদের দেয়ার কথা বলা হলেও এর বেশি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। কিন্ত বাস্তবে দেখা গেছে ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। জমিতে ছোট ছোট যন্ত্রপাতির ব্যবহারে নারীদের সুযোগ পেতে পরিবারভিত্তিক কৃষক কার্ড দিতে হবে, ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশনকে নারী কৃষাণীদের সুবিধা দিতে আরো কাজ করতে হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য গতবছর ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তার সবটুকু খরচ হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ই-কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং-ভিত্তিক সেবার ওপর কর আরোপ করায় নারী উদ্যোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জেন্ডার বাজেট কার্যকর করতে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল কাঠামো তৈরি, জেন্ডার ডিসিএগ্রিগেটেড ডাটা সংগ্রহের প্রতি জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, জেন্ডার বাজেট বই বের না হলেও নারীর জীবনযাপনের কল্যাণে,নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে, গৃহীত প্রকল্পের অগ্রগতির মূল্যায়নের একটা সংক্ষিপ্ত খতিয়ান প্রকাশ করতে হবে।
Advertisement
সভায় বক্তারা আরও বলেন, জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন থেকে কেন সরকার সরে এলো তা পরিষ্কার নয়। কোভিডকালীন সময় নারীর প্রতি অভিঘাত আরও বেশি হয়েছে। জেন্ডার বাজেটের লক্ষ্য থেকে আমরা এখনও দূরে। কোভিড মোকাবিলায় জেন্ডার ইস্যুকে গুরুত্ব দিতে হবে, নারী নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাজেট হলো আর্থিক ক্ষতিয়ান। যেকোনো দেশের উন্নতির জন্য নারীর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ, ও রাষ্ট্র নারীকে সহায়তা করছে তবে নারীর অংশীদারিত্বের খতিয়ান বাজেটে কোথাও দেখি না। এর স্বীকৃতি দিতে হবে। জেন্ডার বাজেটের ধারাবাহিক পরীবীক্ষণ মূল্যায়ন করতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
এইচএস/এসএস/এএসএম