জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী অর্ধশত মডেল মসজিদের উদ্বোধন করবেন কাল

দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বিশ্বের ইতিহাসে এর আগে আর কোনো সরকার একসঙ্গে এতো মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করেনি।

Advertisement

প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার (১০ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করবেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব মো. নুরুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে যুক্ত হবেন। উদ্ভোধনকালে তিনটি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (রংপুরের বদরগঞ্জ, সিলেটের সুরমা ও খুলনা) কর্মকর্তারা যুক্ত হয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলবেন।

বুধবার (৯ জুন) ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন বিষয়ে জানাতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রেস ব্রিফিং করে। এতে লিখিত বক্তৃতা করেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি আজ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকার একসঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। মুসলমানরা সাধারণত তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম মসজিদে সম্পাদন করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের সিংহভাগই স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা (নিচতলা ফাঁকা) মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও ৩টি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।

‘বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। মসজিদগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজকক্ষ, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হেফজখানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন, অটিজম কর্নার, ই-কর্নার, বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শুদ্ধাচার কৌশল। আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক গঠনে এ মসজিদ ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা, সভা, কর্মশালা, ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে লাইব্রেরি, গবেষণাসহ ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা, প্রচার ও বিকাশের নানামুখী ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে একটি দুর্নীতিমুক্ত শোষনমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুবিধাসম্বলিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ বা ইসলামী স্থাপনা নেই বললেই চলে। এ সকল বিবেচনায় বর্তমান সরকার কর্তৃক ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

২০১৮ সালের গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৮টি বিভাগের ৯টি স্থানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এমইউ/এএএইচ/এএসএম