অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা চাইল বিজিএমইএ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তৈরি পোশাক শিল্পকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ ভাইরাসের বৈরি প্রভাব মোকাবিলা করে পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

Advertisement

রোববার (৬ জুন) বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ সহযোগিতার অনুরোধ করেন।

বিজিএমইএর প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), সহ-সভাপতি মো. শাহিদউল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি (অর্থ) খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক আসিফ আশরাফ, পরিচালক মো. খসরু চৌধুরী ও সাবেক পরিচালক মো. মুনির হোসেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও উচ্চ দস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎকালে পোশাক শিল্পখাতে ১৩৩টি রুগ্ন শিল্পের পুনর্বাসনে নীতিগত সহায়তা প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে পুনর্বার অনুরোধ জানানো হয়।

Advertisement

এ সময় ফজলে কবির বলেন, পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই শিল্পকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিজিএমইএ সভাপতির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক, সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করবে। আর যেগুলো বিষয়ে আদেশ জারি করা সম্ভব হবে, সেসব বিষয়ে আদেশ জারির জন্য ব্যাংক উদ্যোগ নেবে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনা মহামারিতে পোশাক শিল্প একটি ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পোশাক শিল্প সংক্রান্ত ইস্যুগুলো সহজীকরণের উদ্যোগ নেয়া হলে তা শিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।

বিজিএমইএ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যে সহযোগিতাগুলো চেয়েছে সেগুলো হলো-

Advertisement

>> পোশাক শিল্পখাতকে এই সংকটময় সময়ে টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে আংশিক রফতানি মূল্য অপ্রত্যাবাসিত থাকলে অন্যান্য প্রত্যাবাসিত রফতানিমূল্যের বিপরীতে রফতানি ভর্তুকি/নগদ সহায়তার আবেদন গ্রহণপূর্বক প্রক্রিয়াকরণ করা এবং এফই সার্কুলার নং-৩০, ২০১৭ সালের ১৬ আগস্টের কার্যকারিতা আগামী ৬ মাস পর্যন্ত স্থগিত রাখা।

>> ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে রফতানিকারকের বন্ডেড ওয়্যার হাউজ লাইসেন্স এবং আইআরসি দাখিলের নিমিত্তে চাপ সৃষ্টি না করার জন্য সকল তফসিলি ব্যাংকের অনুকূলে নির্দেশনা জারি করা।

>> বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মূদ্রাবিধি শিথিলকরণ বিষয়ে জারীকৃত সার্কুলারের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করা।

>> দেশের রফতানি বাণিজ্যের স্বার্থে তারল্য সংকট নিরসনের লক্ষ্যে তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদানের জন্য এফই সার্কুলার নং- ০৫, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারির আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা।

>> ইএক্সপি ওভারডিউ হওয়ার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ যেন রফতানিকারকদের ইডিএফ তহবিল ব্যবহার, নগদ সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা অব্যাহত রাখে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া।

>> নগদ সহায়তার আবেদনের সাথে পরিবহন ডকুমেন্ট হিসেবে এফসিআরকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়ার বিষয়ে জারিকৃত এফই সার্কুলার সংশোধন।

>> শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর করা।

>> রফতানিকারকদের জন্য ব্যাংকিং সংক্রান্ত একটি বিশেষ আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা করা, যার মাধ্যমে রফতানিকারকগণ দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বাতিল/অনিশ্চিত হয়ে যাওয়া রফতানি কার্যাদেশ বা পেমেন্টের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায়-দেনা পরিশোধ সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে আইনগতভাবে সুরক্ষা পাবেন।

>> পোশাক শিল্পের তারল্য সংকট নিরসনে সহায়তা ও রফতানি সক্ষমতা বজায় রাখতে প্যাকিং ক্রেডিটের বিপরীতে সুদের হার ৭ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা।

>> করোনাভাইরাস মহামরির সময়ে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখতে ইডিএফ ফান্ডের সুদের হার ২ শতাংম হতে হ্রাস করে ১.৫ শতাংশ করা এবং একক ঋণগ্রহীতার সীমা ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত প্রদানের সুবিধার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন থেকে বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা। করোনাজনিত কারণে ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা বৃদ্ধি করা।

ইএআর/এমএসএইচ/এমএস