বাংলাদেশের চা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এ বিষয়ে যারা সরাসরি জড়িত; এমন একজনকে নিয়েই আজকের আয়োজন। তিনি ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের হেড অব এক্সপোর্ট মেহেদী হাসান। সম্প্রতি পৃথিবীজুড়ে চায়ের সম্মানের গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
জাগো নিউজ: প্রথমে আপনার সম্পর্কে বলুন—মেহেদী হাসান: আমি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ের ওপর বিবিএ এবং ২০১২ সালে মার্কেটিংয়ের ওপর এমবিএ করি। বর্তমানে ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেডে নিযুক্ত আছি। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরপরই আমি ২০১৩ সালে কর্পোরেট সেক্টরে যোগদান করি। এ সেক্টরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মনোনিবেশ করি। বর্তমানে সফলভাবে কাজ করছি।
ক্যারিয়ারের জন্য কখনো চিন্তা করিনি যে, আমাকে সরকারি চাকরি করতে হবে। তাই পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর কখনো কোনো সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেইনি। কোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিনি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজেকে কর্পোরেট লাইফের সঙ্গে মানিয়ে নেই। আমার ইচ্ছে ছিল কর্পোরেট সেক্টরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। যেহেতু মার্কেটিংয়ের ওপর পড়াশোনা করেছি। তাই ইচ্ছা ছিল মার্কেটিংয়ে কাজ করার। আমি দেখেছি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই আমি আন্তর্জাতিক রফতানি বাজারে কাজ করার চেষ্টা করি এবং সফল হই।
জাগো নিউজ: আপনার ক্যারিয়ারের চেষ্টা ও সফলতা সম্পর্কে যদি বলতেন—মেহেদী হাসান: আমি প্রফেশনাল জীবনে বা ব্যক্তিগত জীবনে সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক রফতানির বাজারে ফুড সেক্টর নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমার কাজের সুবাদে পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি। সরাসরি সেসব দেশের বাজার বিশ্লেষণ এবং চাহিদা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এগুলো ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
Advertisement
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সরাসরি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট থেকে রফতানির জন্য কাজ করে আসছি। এ সুবাদে বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য কোম্পানিতে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছি। এসব কোম্পানি বাংলাদেশের রফতানি বাজারে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে।
আমি ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে পাঁচ বছর এ প্রতিষ্ঠানে অতিবাহিত করি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফলভাবে রফতানির কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে, সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। বর্তমানে ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেডে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের হেড অব এক্সপোর্ট হিসেবে কর্মরত।
জাগো নিউজ: গত ৪ জুন ছিল ‘চা দিবস’। এই শিল্পের মানুষ হিসেবে কী বলবেন?মেহেদী হাসান: বর্তমানে চাকরিসূত্রে আমার প্রধান রফতানি পণ্য চা। যা আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমি ২০২০ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মূলত চা রফতানির কাজ পুরোপুরিভাবে শুরু হয়। আমি সফলভাবে ১ বছরের মধ্যে ২০টি দেশে চা রফতানি করি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, আমরা নিজস্ব প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ড ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে পেরেছি। খুব ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি।
বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর এতগুলো দেশে চা রফতানির কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। আমরা ২০২১ সালে ৪০টি দেশে নিজস্ব ব্র্যান্ডের চা রফতানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে অতীতে কখনো চা রফতানি হয়নি; আমি সেসব নতুন দেশে চা রফতানি করতে সফল হয়েছি। যেমন- এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, ওসেনিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ প্রায় ২০টি দেশ।
Advertisement
বর্তমানে চায়ের আন্তর্জাতিক রফতানি বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০২০ সালে বিশ্বে মোট চায়ের চাহিদা ছিল ৬.৭১ মিলিয়ন টন। ২০২১ সালে এর চাহিদা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭.০০ মিলিয়ন টন পর্যন্ত। বর্তমানে চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি চা রফতানি করছে।
জাগো নিউজ: তরুণ চাকরিপ্রার্থীরা আপনার মত চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে চাইলে কী করতে হবে? মেহেদী হাসান: যারা কর্পোরেট সেক্টরে থেকে আন্তর্জাতিক রফতানি বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠিত করতে চান; তাদের বলব, প্রথমে আপনার লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আপনি কোন সেক্টরে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন, কোন সেক্টরে আপনার কাজ করতে বেশি ভালো লাগে—তার ওপর নির্ভর করবে আপনার ক্যারিয়ার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে।
এসইউ/জিকেএস