করোনাভাইরাস রোধে গত তিন মাস ধরে শহরের ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ১৮ লিটারের জীবাণুনাশক যন্ত্র কাঁধে নিয়ে ছুটছেন সকাল-সন্ধ্যা।
Advertisement
জীবাণুনাশক ছিটানো নেশায় পরিণত হওয়ায় এখন ‘স্প্রে আকাশ’ নামেই ডাকেন এলাকাবাসী। অনেকেই আবার ডাকেন জীবাণুনাশকের ফেরিওয়ালা বলে। তিনি হলেন শহরের বঙ্গজ্বলের বাসিন্দা অসিত কুমার সরকার আকাশ।
মানুষের জীবনকে বিপদমুক্ত ও স্বাচ্ছন্দ্য করতে সচেষ্ট এই যুবকের নাটোরের রাজবাড়ীতে ‘রঙিলা পানের দোকান’ নামে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু চলতি বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত লকডাউনে সেই দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন আকাশ আপন তাগিদে জনসচেতনতার সৃষ্টির জন্য ব্যবসার পুঁজি দিয়েই জীবাণুনাশক ছিটানোর পরিকল্পনা নেন।
প্রথমে ১ মার্চ জীবাণুনাশক ছিটানোর যন্ত্র কিনেন। পরবর্তীতে এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেয়া ভাঙ্গা সাইকেল, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পিপিই, সাউন্ড বক্স এবং স্প্রে মেশিন কিনে ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি এই সেবা প্রদান শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে পথচারীদের হাতেও স্প্রে করার কাজ।
Advertisement
প্রতিদিন ৮০-১০০ লিটার জীবাণুনাশক তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিটিয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে সাইকেল না থাকায় হেঁটেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্প্রের সময় অনেকে বিরক্ত হয়ে তাকে গালিগালাজও করেছেন। আবার উৎসাহও দিয়েছেন অনেকে।
আকাশ বলেন, ‘মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই জীবাণুনাশক ছিটানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। চারপাশের পরিবেশ, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, পাড়া-মহল্লা, হাসপাতাল-ক্লিনিক, ধর্মীয় স্থান, রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব জায়গাই যেন জীবাণুমুক্ত থাকে সেজন্যই আমি এই কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি প্রায় ২০ হাজার লিটার জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। এখন বলা যায় এটি আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। তবে জীবাণুনাশক ছিটাতে গিয়ে ব্যবসার যেটুকু পুঁজি ছিল, তাও শেষের পথে।’
আকাশ বলেন, ‘অনেকেই বিশ্বাস করেন না আমি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এসব করছি। একটা মানুষ এমন কাজ করতে পারে তা বিশ্বাস করে না। এটা হচ্ছে আপনি ভালো কাজ করলে এমন সমালোচনার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তাই এটার দিকে আমি দৃষ্টি দিই না।’
Advertisement
আকাশের মা অঞ্জনা রানী সরকার জানান, আর্থিক অনটনের কারণে ছেলের এই স্বেচ্ছাসেবী কাজে সম্মতি ছিল না পরিবারের। আকাশের প্রতি পরিবারের সদস্যদের একটা ক্ষোভ ছিল। ব্যবসার পুঁজি যা ছিল সবই শেষ করেছে জীবাণুনাশক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে। যখন দেখলেন এটা তার নেশা, তখন তারা আর কোনো অভিযোগ করেননি।
গণমাধ্যমকর্মী খান মামুন বলেন, ‘আকাশকে মার্চের শুরু থেকে দেখছি শহরের আনছে কানাচে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে। পথচারীদের হাতে হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করছে। আর সাইকেলের সামনে বাঁধা সাউন্ডবক্সে বিরামহীন বাজছে করোনার নানা সতর্কতার শ্লোগান। লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় তিনি বর্তমানে এই সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবুও থেমে যায়নি তার সেবা। তার এই সেবা সচল রাখতে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।’
২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদুজ্জামান বলেন, ‘এটা আকাশের একটি মহান উদ্যোগ । আমরা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তার জন্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায় কি-না দেখা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। আমরা এই সমাজ সেবা মূলক কাজে তাকে সহযোগিতার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
রেজাউল করিম রেজা/এসজে/জিকেএস