জিরাফের মতো লম্বা গলা সব নারীর। দেখতেই কি অদ্ভূত! মনে হয় যেন মাথাটা শূন্যে ভেসে আছে। ছোট থেকেই তারা গলায় পিতলেন রিং ব্যবহার করার মাধ্যমে গলা লম্বা করে থাকে। এর বিশেষত্ব শুধু তারাই জানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটকরা জিরাফ নারীদেরকে দেখতে ভিড় জমায় থাইল্যান্ডে।
Advertisement
শুধু জিরাফ নারীরাই নয়, থাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। মায়ানমারের সীমান্তে এবং উত্তর থাইল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে কায়ান লাহ্বি নামক কায়ান সম্প্রদায়ের উপজাতিরা। কায়ান নারীরা বংশপরম্পরায় অতি সুন্দরী হয়ে থাকেন। তাদের সৌন্দর্য না-কি আরও বাড়িয়ে তোলে তাদের জিরাফ গলা।
তারা কেন গলা লম্বা করার অদ্ভুত এই সংস্কৃতি মেনে চলেন? অনেকেরই মত, বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তারা গলায় ভারি এই সুরক্ষাবেষ্টনি পরে থাকেন। আবার অন্যদের মত, তাদের এই বিশেষত্বের কারণে কেউ অপহরণ করার সুযোগ পাবে না। কারণ তাদের গলা জিরাফের ন্যায় লম্বা! এজন্য তাদেরকে খুঁজে বের করা সহজ।
কায়ান নারীরা তাদের এই নিখুঁত সৌন্দর্য নিয়ে গর্ব করেন। প্রতি বছর বহু পর্যটক ভিড় জমান ‘জিরাফ নারী’দেরকে দেখতে। পর্যটকদের মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় সরকার আয়ও করছে। কায়ান নারীরা কারুশিল্পে পারদর্শী। তারা নিজেদের তৈরি বিভিন্ন কারুপণ্য দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রয় করে থাকেন।
Advertisement
দুই দশক আগে কায়ান এবং বার্মিজ সরকারের মধ্যে তীব্র গৃহযুদ্ধের ফলে কায়ান মানুষ মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের উত্তরের পাহাড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। থাই সরকার তাদের শরণার্থী হিসেবে নয়, অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসাবে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
এই পার্বত্য উপজাতি নারীদের অস্বাভাবিক চেহারা দেখা এবং ছবি তোলার জন্য প্রতি বছর আনুমানিক ৪০ হাজার পর্যটক সেখানে ভিড় জমায়। প্রত্যেকেই ৮-১০ ডলার প্রদান করে পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করেন। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, খুব কম অর্থই সরাসরি গ্রামবাসীদের হাতে যায়। ঘাড়ে রিং পরা নারীরা সেখানকার বিভিন্ন গিফট শপে কাজ করেন। যেখানে কারুশিল্প বিক্রয় করা হয়।
এই নারীরা খাবার ও টয়লেট্রিজের ভাতা হস্তশিল্প বিক্রয় থেকে লাভ হিসেবে পেয়ে থাকেন। গলায় পিতলের রিং পরা নারীরা অতিরিক্ত বেতন পেয়ে থাকেন। তবে কোনো নারী যদি দর্শনার্থীদের সঙ্গে তাদের দুর্দশার বিষয়ে আলোচনা করতে সেল ফোন বা কম্পিউটারের মতো আধুনিক কিছু ব্যবহার করেন; তাহলে গ্রামের মালিকরা মজুরি হ্রাস করেন।
জানা গেছে, মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই কায়ান কন্যাশিশুদের গলায় পতলের রিং পরানো হয়। এরপর ধাপে ধাপে রিং এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রিংগুলো পরা তাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বয়ে আনে। মনে হতে পারে রিংগুলো তাদের গলাকে আরও লম্বা করছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের গলার হাড় বরং নীচে রেমে যাচ্ছে; যার ফলে মেরুদণ্ডটি ধসে পড়েছে।
Advertisement
জেএমএস/এমকেএইচ