রাজনীতি

নিজেকে সরিয়ে নিলেন আলোচিত মেয়র রেফাত

সাভারের আলোচিত মেয়র আলহাজ্ব রেফাত উল্লাহ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। মামলা মোকদ্দমা আর জেল হাজত থেকে বাঁচতে এবার দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন না তিনি। দলের হাই কমান্ড থেকে তাকে বাছাই করে রাখা হলেও নিজেই দলকে  না` সংকেত পাঠিয়েছেন রেফাত উল্লাহ। তার স্থলে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান বদিকে। আলহাজ্ব রেফাত উল্লাহ টানা তিন মেয়াদে সাভার পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজধানীর উপকণ্ঠে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া  সত্ত্বেও সাভার পৌর এলাকায় নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। ক্ষমতায় থাকাকালীন দলীয়করণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পৌরসভার অধিকাংশ কমিশনার আওয়ামী লীগ পন্থী হওয়ায় তাদের এলাকায় কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ দিতে চাইতেন না আলোচিত এই মেয়র। সাভারের এই মেয়র সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন রানা প্লাজা ধ্বসের পর। রানা প্লাজার ত্রুটিপূর্ণ নকশা অনুমোদন দেয়ার অভিযোগে প্রথমবারের মত তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাভারে সংঘটিত বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বেড়াজালে তাকে আটক করে পুলিশ।  সেইসব মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার জের ধরে তাকে থাকতে হয়েছে ক্ষমতার বাইরে। সাভার পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি সাভার পৌর বিএনপিরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু নানা কারণেই সংসদ ও সংসদের বাইরে নিজ দলের নাজুক অবস্থায় হতাশ হয়েই এবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা না করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ইশারায় বিনা কারণেই বহুবার তাকে জেলে নিয়েছে পুলিশ এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে তার কাছ থেকে। বছর দুয়েক ধরে গণমাধ্যম কর্মীদেরও এড়িয়ে  চলেছেন মেয়র রেফাত উল্লাহ। তার বড় ছেলে জেহান সাব্বির এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার বাবা আর মেয়র হতে চান না। তিনি এখন তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবে বেচেঁ থাকতে চান। বাবা এখন বয়সে প্রবীণ। এই বয়সেও তাকে মাঝে মাঝে জেল খাটতে হয়। এর পিছনে একটাই কারণ তা হল- ‘মেয়র পদবী’। সাব্বির বলেন, আমার বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হয়েও ২০১১-২০১৫ মেয়াদে তাকে তিনবার জেল খাটতে হয়েছে। কখনও ছয় মাস ও কখনও তিন মাস। জেল থেকে বের হয়ে এসে পৌরসভার দায়িত্ব নেয়ার দুই দিন পরেই তাকে আবার গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার এড়াতে পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর তাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। পুলিশ এসব করেছে ক্ষমতাসীন নেতাদের ইশারায়। আমার বাবা না থাকলে তারা ইচ্ছেমত টেন্ডার দখল করতে পারে। এজন্য তারা পৌরসভার মেয়রের চেয়ারে তাকে দেখতে পছন্দ করতেন না।  সাব্বির আরো বলেন, একজন নির্বাচিত মেয়র ছিলেন আমার বাবা। কিন্তু কথায় কথায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত দুই বছরে দুই বার বরখাস্তের আদেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যেসব অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল সে অভিযোগগুলো ছিল ভিত্তিহীন। যখন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক একজন কাউন্সিলর। পুরো পাঁচ বছর জুড়ে একইভাবে আমার বাবাকে তার চেয়ারে বসতে দেয়া হয়নি। আসন্ন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে মেয়র রেফাত উল্লাহর ছেলে সাব্বিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, জীবনে বহুবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বাবা। কোনো বার পরাজিত হননি। বর্তমান সময়ে মানুষের ভোটের অধিকার নেই। দলীয় ব্যানারে যেহেতু এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় ক্ষমতাসীনরা কি করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বাবা তাতে অংশ নিতেন এবং কিছুতেই পরাজিত হতেন না। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাভার পৌরসভায় এবার যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তিনি অস্ত্রের মুখে সব কেন্দ্র দখল করে নিবে সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।সাব্বিার বলেন, তফসিল ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন দিন আগে আমাদের বাড়িতে হানা দিয়েছে ডাকাতরা। এই বাড়িতে আমার বাবা জন্মের পর থেকেই বসবাস করে আসছেন। কিন্তু কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। তাকে জেলে পাঠিয়ে আমাদের বাড়িতে ডাকাত বেশে  হানা দেয়া হয়েছিল। এখন জীবন নিয়ে আতঙ্কে থাকেন বাবা। তার কাছে স্ত্রী সন্তানের তুলনায় মেয়র পদবী বড় নয়।  তিনি আরো বলেন, এবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন না বলে নিজের দলকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু বিএনপির হাই কমান্ড থেকে তাকে বারবার ফোনে মনোনয়নপত্র কেনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই কথায় সাড়া দেননি রেফাত উল্লাহ।সর্বশেষ গত বুধবার রাতেও রেফাতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিএনপি মনোনয়ন কমিটি। তিনি তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে বৃহস্পতিবার সাভার পৌর নির্বাচনে বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান বদিকে মনোনীত করে বিএনপি।   আল-মামুন/এসকেডি/জেডএইচ/এমএস

Advertisement