কাঁটাতারের দুই পাশে দাঁড়িয়ে এক মিলন মেলায় অংশ নেয় কয়েক হাজার বাঙালি। ভালোবাসা, মমতা আর রক্তের টানে দুই দেশের অগণিত মানুষের এ মিলন মেলা যেন এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে। কেউ কেউ কাঁটাতারের ওপর দিয়ে বিস্কুট, চানাচুর, আপেল, কমলা ছুঁড়ে দিচ্ছেন প্রিয়জনদের কাছে। কেউবা আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে এমন আবেগঘন পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে কেঁদে ফেলছেন। তবে সে কান্না বিরহের নয়, আনন্দের।ঠাকুরগাঁওয়ের কোচল ও চাপাসাড় সীমান্তে দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ মেলা চলে। ঠাকুরগাঁও ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়ান ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের উদ্যোগে এ মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।মিলন মেলাকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সীমান্তে পর্যাপ্ত বিজিবি ও বিএসএফ মোতায়েন করা হয়। কঠোর পাহারায় কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে স্বজনদের এক দৃষ্টি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মানুষের ঢল নামে। এই ক্ষণিক মিলনে অনেকেই আবেগে নিজেদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।রাধা ও বাসন্তির ভাই হরিদাশ থাকেন শিলিগুড়িতে। বোনের জন্য পিঠা এনেছেন। কথা হলেও নিজ হাতের তৈরি পিঠা দিতে পারেননি। তবুও দেখার আনন্দ নিয়ে বিদায় নিলেন তারা।দেবী রানী এসেছেন ভারতের কাকরমনি গ্রামে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুভূতি বলতে গিয়ে দেবী রানী বলেন, বিয়ের পর এই প্রথম মাকে দেখলাম। তবে তেমন কথা হয়নি। অসুস্থ মাকে একনজর দেখে এলাম। এখন একটু ভালো লাগছে।হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, হরিপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয়-স্বজনেরা দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর এদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেনা। অপেক্ষা করে থাকে এই দিনের জন্য।দুই দেশের ভৌগলিক সীমারেখা আলাদা করা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে। কিন্তু সে কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি দুই দেশের মানুষের ভালবাসা ও রক্তের টান। সুযোগ পেলেই এ টানেই তারা ছুটে যায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে, মিশে যান একে অন্যের সঙ্গে। অনেক দিন পর আপনজনের দেখা পেয়ে আবেগে কেঁদে বুক ভাসান অনেকেই। বিনিময় করেন মনের জমানো হাজারো কথা।সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভারত আর বাংলাদেশের যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারে না, তারা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকে। এই দিনে তারা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। সকাল থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এখানে এসে ভিড় জমান। আর এ দিনটির জন্য সবাই করেন অপেক্ষা।সাধারণ মানুষসহ নানা পেশার মানুষ এ মিলন মেলায় এসে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারায় আনন্দিত হয়। এই আবেগের জায়গা থেকেই অনেকেই সরকারের প্রতি দাবি তুলেছেন, এ মিলন মেলাকে যেন দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায় রূপান্তরিত করে স্থায়ী রূপ দেয়া হয়।রবিউল এহসান রিপন/এআরএ/পিআর
Advertisement