কৃষি ও প্রকৃতি

ফরিদপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে আবাসস্থল। কমছে ফসলি জমি। ফলে দিন দিন ছোটো হয়ে আসছে চাষাবাদের জমি পরিমাণ। অন্যদিকে কংক্রিটের শহরের মানুষের গাছ লাগাবার মতো জায়গা পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

Advertisement

তাই শখ করে বাগান কিংবা নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য শহরের মানুষদের জন্যে ছাদের কোনো বিকল্প নেই। এসব দিক বিবেচনা করে ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছাদ বাগান। সৌখিন বাগানিরা বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন নানা ধরনের ফল, ফুল ও সবজি বাগান। এসব ছাদ বাগানে বিভিন্ন জাতের মৌসুমী ফল, ফুল ও সবজি শোভা পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর শহরে প্রায় ৫০টি ছাদ বাগান গড়ে উঠেছে। ছাদ বাগান থেকে নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে বাড়ির ছাদে ফল, সবজি ও ফুল বাগান করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদেরও চাহিদা পূরণ করতেই ছাদ বাগানের প্রতি ঝুঁকছে শৌখিন মানুষ।

Advertisement

ফলে বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ ও নানা জাতের সবজি ও ফুলের চাষ করা হচ্ছে। এ যেন বিপন্ন প্রকৃতির মাঝে সবুজের বিপ্লব। বিশুদ্ধ অক্সিজেনের কারখানা। আর এই অক্সিজেনের কারখানা গড়ে তুলেছেন ফরিদপুরের অনেক সৌখিন বৃক্ষপ্রেমী।

ফরিদপুর ডিসির কার্যালয়ের ছাদে তারা নামের উদ্যানের উদ্বোধন করা হয়েছে সম্প্রতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে তারা উদ্যান। গত ৩০ মে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার ছাদ বাগানের এ উদ্যান উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় নিজের বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফল ও সবজির বাগান। অবসর সময়ে বাগান পরিচর্যা করছেন বাগানিরা। বর্তমানে ফরিদপুরের ছাদ বাগান গুলোতে ঝুলছে হিমসাগর, গোরমতি, আম্রপালী, ব্যানানা ম্যাঙ্গসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম। এ ছাড়াও আছে কমলা, মাল্টা, ডালিম, লেবু, পেয়ারা, আমড়া, ড্রাগন, আনারসহ বিভিন্ন প্রকার ফল। ফলের পাশাপাশি আছে সবজি ও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ।

সৌখিন ছাদ বাগানি মোস্তাফিজুর রহমান লাবলু বলেন, গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে বাগান করেছি। পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও মিটছে। ভেজালমুক্ত ফল ও সবজি খাচ্ছি। পাশাপাশি অক্সিজেনেরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বর্তমানে বাগানে ঝুলছে বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমী ফল।

Advertisement

এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রকার গোলাপ, রাধাচূড়া, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন প্রকার ফুল। অবসর সময়ে বাগানে সময় দিচ্ছি। নিরাপদ ফল ও সবজি ছাড়াও পাচ্ছি অক্সিজেন। আমার ছাদ বাগান হয়ে উঠেছে অক্সিজেন চেম্বার। আমার ছাদ বাগান দেখে অনেকেই নতুন করে ছাদ বাগান করেছে।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার স্কুল শিক্ষক আবুল বাসার মিয়া। বৃক্ষপ্রেমী আবুল বাসার মিয়া নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফলের বাগান। নগরকান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার আশুতোষ কুমার বিশ্বাসের সহযোগিতায় নিজের বাড়ির ছাদে দুই বছর আগে গড়ে তুলেছেন ফল ও সবজির বাগান। আবুল বাসাকে বাগানের কাজে সহযোগিতা করেন তার দুই কন্যা।

বাগানে কমলা, মাল্টা, ডালিম, হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাঙ্গ, হাঁড়িভাঙা, ফজলি আম, লেবু, পেয়ারা, আমড়া, ড্রাগন, শরিফা, জাম্বুরাসহ ২৩ প্রকার ফলের গাছ। আছে করলা, চিচিংগা, ঝিংগা, কাচা মরিচ, ক্যাপসিকাম, পুদিনা পাতা, লাল শাক ও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ। বর্তমানে বাগানে ঝুলছে বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমী ফল ও সবজি।

শুধু স্কুল শিক্ষক আবুল বাসারই নন, ছাদে বাগান করেছেন শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের বাসিন্দা রাজনীতিবিদ একেএম কিবরিয়া স্বপন। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি তার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফলের বাগান। ছাদে ফুটিয়েছেন দুর্লভ পদ্ম ফুলও।

বর্তমানে তার বাগানে ঝুলছে, মাল্টা, কমলা, কামরাঙ্গা, ছবেদা, আমড়া, কদবেল, ডালিম, আমলকিসহ বিভিন্ন প্রকারের ফল। দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। কিছু ফলগাছ আছে সারাবছর ফল ধরে। ছাদের বাগানে চাষ করা বিষমুক্ত ফল নিজেরা খাচ্ছেন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিচ্ছেন।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আশুতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, বাড়ির মালিকদের সাথে কথা বলে ছাদে বাগান করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সেই প্রচেষ্টায় শিক্ষক আবুল বাসার দেড় বছর আগে বাগান শুরু করেন। ইতোমধ্যে ছাদে প্রায় ২০ প্রকার ফল এর চারা রোপণ করেন।

বর্তমানে বাগানে বিভিন্ন প্রকার ফল ধরেছে। বাড়ির পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সম্ভব হচ্ছে। তার দেখাদেখি বিভিন্ন ব্যক্তি ছাদে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে আসছি।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী জানান, ফরিদপুর জেলায় ছাদ কৃষি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা যদি সবুজা নগরী চাই, অর্থাৎ “গ্রীন সিটি” চাই তাহলে দু’ভাবে আমরা করতে পারি। পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করে। প্রত্যেকটি সুউচ্চ ছাদ ব্যবহার করে। ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ছাদ বাগান থেকে প্রায় বারো মাসই ফল এবং সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ছাদ বাগানের পরামর্শ দিয়ে থাকি। আগামীদিনে ছাদ বাগানের মাধ্যমে পুষ্টি ও নিরাপত্তা পূরণ হবে।

চাষাবাদের জমি কমে আসলেও, মানুষের মন থেকে কিন্তু হারিয়ে যায়নি সবুজের হাতছানি পাওয়ার আশা। এ কারণেই আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর ছাদে সকলেই ফল ও ফুলের বাগান গড়ে তুলবেন এমটাই প্রত্যাশা আমাদের।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাছে ছাদ বাগান। যা খুবই ভালো উদ্যোগ। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদকে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এটার নাম দিয়েছি তারা উদ্যান।

বিভিন্ন প্রজাতির ফুল আর ফল গাছের সমারোহ থাকবে এখানে। তিনি আরও বলেন, ফরিদপুরবাসীর প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে যদি সুযোগ থাকে তাহলে নিজেদের ছাদ বাগান গড়ে তোলার পাশাপাশি উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান।

এন কে বি নয়ন/এমএমএফ/এএসএম