চিজ বা পনির দুগ্ধজাত খাবার। এটি খেলে ওজন বেড়ে যায়, এমনই মত সবার। তবে জানেন কি, স্বাস্থ্যকর কয়েকটি চিজ আছে। যেগুলো খেলে আপনার ওজন বাড়বে না, আবার চিজের মজাও উপভোগ করতে পারবেন।
Advertisement
বিভিন্ন প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি করা হয় পনির। এটি কোন দুধ থেকে এবং কীভাবে উৎপাদিত হয়, তার উপর পনিরের পুষ্টি ও স্বাদ নির্ভর করে। অনেকেই ভাবেন, পনিরে ফ্যাট, সোডিয়াম এবং ক্যালোরি বেশি থাকে।
তবে জানেন কি, পনির হলো প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের একটি দুর্দান্ত উৎস। পনির খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানোসহ হৃদরোগ এবং অস্টিওপরোসিস থেকেও মুক্তি মেলে। জেনে নিন তেমনই কয়েকটি স্বাস্থ্যকর চিজ, যেগুলো খেলে বাড়বে না ওজন-
১. মোজারেলা: এই চিজের জনপ্রিয়তা সব দেশেই। মোজারেলা পনিরের উৎপত্তি ঘটে ইতালিতে। ইতালিয়ান মহিষ বা গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয় এটি। মোজরেলায় অন্যান্য চিজের চেয়ে সোডিয়াম এবং ক্যালোরি কম থাকে।
Advertisement
১ আউন্স (২৮ গ্রাম) মোজারেলায় থাকে ক্যালোরি ৮৫, প্রোটিন ৬ গ্রাম, ফ্রাট ৬ গ্রাম, কার্বস ১ গ্রাম, সোডিয়াম ১৭৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম আরডিআইয়ের ১৪ শতাংশ ইত্যাদি।
প্রাণী এবং মানব উভয় দেহে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই চিজ খেলে এতে থাকা প্রোবায়োটিক অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। অনাক্রম্যতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আপনার দেহ প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এই চিজ খেলে কমবে ওজনও। ১,০৭২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপরে করা এক সমীক্ষায় এমনই তথ্য জানা গেছে।
২. রিকোটা: ইতালিয়ান পনির এটি। যা গাভী, ছাগল, ভেড়া বা ইতালিয়ান মহিষের দুধ থেকে তেরি করা হয়। রিকোটা পনির দেখতে অনেকটা ক্রিমযুক্ত। আধা কাপ (১২৪ গ্রাম) রিকোটায় থাকে ক্যালোরি ১৮০, প্রোটিন ১২ গ্রাম, ফ্যাট ১২ গ্রাম, কার্বস ৮ গ্রাম, সোডিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম: আরডিআইয়ের ১৩ শতাংশ, ক্যালসিয়াম: আরডিআই এর ২০ শতাংশ।
রিকোটা পনিরের প্রোটিনে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। যা সহজেই শোষিত হয় এবং পেশী বৃদ্ধিতে কাজ করে। রক্তচাপ কমায় এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
Advertisement
৭০ জন অতিরিক্ত ওজন আছে এমন ব্যক্তিদের উপর করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১২ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ৫৪ গ্রাম রিকোটা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের রক্তচাপ ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
সুইস পনির: সুইজারল্যান্ডে এই পনির তৈরি করা হয়। সাধারণত গরুর দুধ থেকে তৈরি হয় এটি। এতে বাদামের স্বাদ থাকে। ১ আউন্স (২৮ গ্রাম) সুইস পনিরে থাকে ১১১ ক্যালোরি, প্রোটিন ৮ গ্রাম, ফ্যাট ৯ গ্রাম, কার্বস ১ গ্রামেরও কম, সোডিয়াম ৫৩ মিলিগ্রাম।
যেহেতু এতে অন্যান্য চিজের তুলনায় সোডিয়াম এবং ফ্যাট কম থাকে; তাই সুইস পনির যে কেউ খেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, সুইস পনিরে থাকা বিভিন্ন যৌগ, যা অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরকারী এনজাইম (এসিই) কে বাঁধা দেয়।
সুইস পনির আপনি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন বিভিন্ন ফল, স্যান্ডউইচ, ডিমের বেক, বার্গার এবং ফ্রেঞ্চ পেঁয়াজের স্যুপের সঙ্গে। সুইস পনিরে অন্যান্য চিজের চেয়ে কম ফ্যাট এবং সোডিয়াম থাকে।
8. চেদার: ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় এক পনির এটি। গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয়। ১ আউন্স (২৮ গ্রাম) চেদারে থাকে ১১৫ গ্রাম ক্যালোরি, প্রোটিন ৭ গ্রাম, ফ্যাট ৯ গ্রাম, কার্বস ১ গ্রাম, সোডিয়াম ১৮০ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়ামসহ ইত্যাদি।
চেদার ভিটামিন কে-২ এর ভালো উৎস। ভিটামিন কে হৃৎপিণ্ড এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ধমনী এবং শিরার দেওয়ালে ক্যালসিয়াম জমা হতে বাঁধা দেয়।
ভিটামিন কে এর অভাবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম তৈরির কারণে রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ওজন কমাতেও এই পনির বিশেষ উপকারী।
ছাগল পনির: ছ্যাভের নামেও পরিচিত এই পনির। এটি ছাগলের দুধ থেকে তৈরি করা হয়। ১ আউন্স বা ২৮ গ্রাম ছাগলের পনিরে থাকে ৭৫ গ্রাম ক্যালোরি, ৬ গ্রাম ফ্রাট, কার্বস ০ গ্রাম, সোডিয়াম ১৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
এ ছাড়াও ছাগলের দুধে গরুর দুধের চেয়ে বেশি মাঝারি-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এ ধরণের ফ্যাট আপনার দেহে দ্রুত শোষিত হয় এবং চর্বি হিসেবে সংরক্ষণের সম্ভাবনা কম থাকে।
বিশেষত, ছাগলের পনিরে এ ২ কেসিন থাকে। যা গরুর দুধে থাকা এ ১ কেসিনের তুলনায় কম প্রদাহজনিত। ছাগলের পনিরে ল্যাকটোজ কম থাকে এবং এতে প্রোটিন থাকে যা গরুর দুধের থেকে চিজের চেয়ে আরও সহজে হজম হতে পারে।
আজ ওয়ার্ল্ড চিজ ডে বা বিশ্ব পনির দিবস। ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মনরোতে এ দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পনিরের বিভিন্ন খাবার খেয়ে এই দিবস পালিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে।
সূত্র: হেলথলাইন
জেএমএস/জেআইএম