সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে একই জায়গায় মিছিল-স্লোগান দেন। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ‘ভোট চোর’ বলে স্লোগান দিলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও ‘রাজাকাররা গেল কই’ বলে স্লোগান দেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) নবনির্বাচিত সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু মারা যাওয়ার পর ওই পদ নিয়ে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে চলছে এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি।
গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা করে কার্যনির্বাহী কমিটির আওয়ামীপন্থী অংশ। তারা দাবি করেন- সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় এএম আমিন উদ্দিন কণ্ঠভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
Advertisement
সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাডে এক বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা বলেন, তার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১ জুন) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সমিতির সভাপতি পদে এএম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করলে উপস্থিত সদস্যরা করতালি ও কণ্ঠভোটে তার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। ফলে এএম আমিন উদ্দিনকে ২০২১-২২ মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের জন্য সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এএম আমিন উদ্দিন সভাপতি পদে ২০২১-২০২২ মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যাসহ সাতজন কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য একমত পোষণ করে স্বাক্ষর করেছেন।
অপরদিকে বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের ছয়জন সদস্য স্বাক্ষর করেননি।
পরে সমিতির প্যাডে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশেষ সাধারণ সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে সভাপতির পদটি শূন্য হয়।
Advertisement
আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে সভাপতি নির্বাচনের করণীয় ঠিক করতে গত ৪ মে বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। সভার শুরুতে সাধারণ সভার সভাপতিত্ব নিয়ে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এ অবস্থায় সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন যে, বারের সংবিধান অনুযায়ী- আমি এ সভা পরিচালনা করবো। তখন এক পক্ষ বিরোধিতা শুরু করলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ ডায়াসে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন।
ওই দিন সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, উনাকে সভাপতিত্ব করার কোনো কার্য বিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহ-সভাপতি আছেন। তখন শফিক উল্লাহ বলেন, আমি আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি- আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন। তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তাকে সমর্থন দেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন- কণ্ঠভোটে নয়, নির্বাচন চাই। এক পর্যায়ে মিলনায়তনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। মঞ্চের ওপর ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
তখন সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সাধারণ সভা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি না থাকায় সভা মুলতবি করা হলো। মূলত তুমুল হট্টগোলের মধ্য দিয়ে বিশেষ সাধারণ সভা শেষ হয়।
এফএইচ/এআরএ/এএসএম