‘দুই বছর হয়ে গেল বাবার আদর পাই না। সেদিন ছিল আমার জম্মদিন। আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে শাহবাগে ফুল কিনতে গেলে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। বাবাকে ছাড়া আমাদের জীবন অচল। প্রধানমন্ত্রী প্লিজ, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’ -কথাগুলো পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাজের। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে মাইক্রোফোন হাতে কাঁপা কাঁপা গলায় ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা মো. সোহেলকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এভাবেই আকুল আবেদন জানায় সে।সোহেলকে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ডিবি পরিচয়ে শাহবাগ থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যরা থানা, পুলিশ, ডিবি সর্বত্র খুঁজেও তার সন্ধান পায়নি। শুধু রাজই নয়, দুই বছর আগে নিখোঁজ হওয়া মোট ১৯ পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে স্বজনদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি করজোড়ে অনুরোধ জানান।তারা কেউ জানেন না, তাদের স্বজনরা আদৌ বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। নিখোঁজ ১৯ জনের পরিবারের বিভিন্ন বয়সী (৭০ বছরের বৃদ্ধ থেকে ৫ বছরের শিশু) মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তন। স্বজনরা বলেন, তাদের সন্তানরা অপরাধ করে থাকলে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া হোক কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এতগুলো জলজ্যান্ত মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। এছাড়া নিখোঁজ হওয়া ১৯ জনের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে স্বজনবিহীন দুর্বিসহ জীবনযাপনের নির্মম অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, শাহিনবাগের সাজেদুল ইসলাম সুমন, বংশালের মো. সোহেল, পারভেজ হোসেন,বসুন্ধরার জাহিদুল করিম তানভীর, পূর্বনাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভুঁইয়া মাসুম, পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল, কাউসার, সূত্রাপুরের সেলিম রেজা পিন্টু, সম্রাট মোল্লা, উত্তর মুগদার আসাদুজ্জামান রানা, উত্তর বাড্ডা বড় বেড়াইদের আল আমিন, শাহিনবাগের এম এ আদনান চৌধুরী, বাংলাবাজারের জয় চন্দ্র ঘোষ লেনের খালিদ হাসান সোহেল, বংশালের হাজী আবদুল্লাহ সরকার লেনের হাবিবুল বাশার জহির, মোল্লারটেকের নিজামউদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, বাসাবোর মাহবুব হাসান সুজন ও কাজী ফরহাদ।নিখোঁজ হওয়া এসব পরিবারের সদস্যরা ৪ ডিসেম্বরকে ‘গুম দিবস’ হিসেবে পালন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।এমইউ/আরএস/পিআর
Advertisement