‘আমি এবার জোর দিয়ে বলছি, বাজেটে বেকারভাতা চালু করতে হবে। অর্ধকোটি মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছে। শিক্ষিত তরুণরা দুই বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশ করতে পারছে না। তাদের সামনে কোনো পথ নেই। দেশে প্রতি চারজনে একজন বেকার। শিক্ষিতদের প্রতি তিনজনে একজন বেকার। এ কারণেই বেকারদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করি।’
Advertisement
বলছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডির অনারারি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট এবং এতে কর্মহীন মানুষের প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছে জাগো নিউজের।
দীর্ঘ আলোচনার একাংশে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে বলে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু যে কাঠামোতে প্রণোদনা দিচ্ছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। প্রথমত, সরকার তার ব্যয় বাড়াতে পারেনি। তারল্য হিসেবে প্রণোদনার অর্থ মানুষ নিতে পারেনি প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে। শতকরা ৮০ শতাংশই ছিল ঋণনির্ভর প্রণোদনা। ২০ শতাংশ নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে। কৃষি ভর্তুকির মধ্যে প্রণোদনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সরকার আগের বছরগুলোতে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে যে বাড়ি উপহার দেয়া হচ্ছে, সেটাও প্রণোদনা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। সরকার বেশি করে দেখাচ্ছে যে মানুষকে নানাভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫০ লাখ মানুষকে ২৫০০ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হল। আর সাহায্য দিতে পারল ৩৫ লাখ মানুষকে। টাকার অভাব ছিল না। সাংগঠনিক কাঠামোর সমস্যা ছিল। অথচ বেসরকারি সংগঠন বা সামাজিক অন্য শক্তিকে কাজে লাগাতো পারত সরকার। তারা তথ্য-উপাত্ত দিতে পারত। প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে পারত। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ছিল না প্রথম থেকেই। সরকার আবারও মোবাইলের মাধ্যমে সাহায্য দেয়ার কথা বলছে। গতবারের পরিবারগুলোই পাবে এবারও। অথচ ৩০ লাখ পরিবার নতুন করে গরিব হয়েছে। বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন নিয়ে।
Advertisement
দেশে করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্ম হারিয়েছেন
এই অর্থনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, সরকার তো সবার প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য দেয়াল তুলে রাখবে কেন? সবই মনিটরিং করতে পারে। সরকারের বাইরে কেউ না। জবাবদিহিতাই বড় বিষয়। সরকারের বুঝতে পারার ব্যাপার হলো যে, একার পক্ষে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। যেটুকু সম্পদ আছে তাতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। করোনা সংকট দুই-তিন বছর থাকতে পারে বলে আমরা বলেছিলাম। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শেষ হয়ে যাবে। অথচ এখনো লকডাউন চলছে। প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি নিয়েই বসবাস করা লাগতে পারে। এটিই বাস্তবতা।
বেকার সমস্যা নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই অতিমারি একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিচ্ছে—বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ এমন ঝুঁকি বা ধাক্কা সামলানোর মতো অবস্থায় নেই। এর ফলে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা ধপাস করে পড়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের ঠেকা দেয়ার কিছু নেই। উন্নত বিশ্বে এই ঠেকা দেয়াকে বলে সার্বজনীন সুরক্ষা। কোনো কারণে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে, যেন নিঃশেষ হয়ে না যায়।
‘আমি এবার জোর দিয়ে বলছি, বেকার ভাতা চালু করতে হবে। অর্ধকোটি মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছে। শিক্ষিত তরুণরা দুই বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশ করতে পারছে না। তাদের সামনে কোনো পথ নেই। বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন বেকার। শিক্ষিতদের প্রতি তিনজনে একজন বেকার। এ কারণেই বেকারদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। বেকারভাতার জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা যায়। ৩৩৩ নম্বরের মতো বেকারদের জন্য বিশেষ নম্বর বা অ্যাপস চালু করতে হবে। সেখানে বেকাররা তাদের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধন করতে পারবে।’
Advertisement
‘নতুন বাজেটে কর্মসংস্থান এবং গরিব মানুষকে সাহায্য কীভাবে-কতটুকু দেয়া হচ্ছে সেটাই মূল আলোচনা হওয়া জরুরি বলে মনে করি’—বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এএসএস/এইচএ/এমকেএইচ