দেশজুড়ে

ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

আজ ৪ ডিসেম্বর। ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস। আজকের এই দিনে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী ১০০ এম টি এম রেজিমেন্ট, পাকিস্তানি দখলদার খান সেনাদের সঙ্গে প্রাণপণ যুদ্ধ করে ফুলবাড়ী উপজেলাকে শত্রু মুক্ত করেন। চূড়ান্ত বিজয়ের ১২ দিন আগে এই বিজয় মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গৌরব  স্বরণ করে এই অঞ্চলের মানুষ।সেই থেকে ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, আজকের এই দিনে ভোর থেকে উপজেলার সীমান্ত এলাকা আটপুকুর, আমড়া ও জলপাইতলি এলাকা দিয়ে একযোগে খান সেনাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে দাঁড়াতে না পেরে খান সেনারা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিছনে পালাতে শুরু করে। তাদের নিশ্চিত পরাজয় ভেবে ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর প্রবেশ রোধ করতে ফুলবাড়ী শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর উপর লোহার ব্রিজটির পূর্ব অংশ দুপুর ২টার সময় ডিনামাইন্ড দিয়ে উড়িয়ে দেয় খান সেনারা। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীদের পুনরায় অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করতিকিছুটা দেরি হয়। এই সুযোগে ফুলবাড়ীতে অবস্থান করা খান সেনা ও তারদের সহযোগী রাজাকারেরা ট্রেনযোগে ফুলবাড়ী থেকে সৈয়দপুরের উদ্দ্যেশে পালিয়ে যায়। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনটিকে ঠেকাবার য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল।এরপর ওই দিন বিকেল ৫ টায় ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী ও মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে ফুলবাড়ীকে শত্রু মুক্ত বলে ঘোষণা দেন এবং সড়ক ও জনপদের ডাক বাংলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।খান সেনাদের উড়িয়ে দেয়া লোহার ব্রিজটি পুনরায় ইট সিমেন্ট দ্বারা নির্মাণ করা হয় যা আজও মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই দিনের স্মৃতি স্মরণ করে আজও শিউরে উঠে সে সময়ের মানুষ। সারা দেশের চূড়ান্ত বিজয়ের ১২দিন আগে ফুলবাড়ী মুক্তিযোদ্ধাদের এই অর্জন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য এবং নতুন প্রজ্ন্মকে জানিয়ে দেয়ার জন্য ফুলবাড়ীবাসী ৪ ডিসেম্বরকে ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এবারও দিনটিকে পালন করতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।শহরের প্রবীণ ব্যক্তি ও মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, ২৫ মার্চ পযন্ত ফুলবাড়ী শান্ত ছিল। ফুলবাড়ীকে শান্ত রাখার জন্য একটি সর্বদলীয় ও সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির ব্যানারে ২৬ মার্চ একটি শান্তি মিছিল ফুলবাড়ী শহর প্রদক্ষিণ করার সময় শহরের কাটাবাড়ী বাংলা স্কুল এর সামনে আসলে অবাঙালি কলোনি থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর হামলা করা হয়। এতে কয়েকজন আহত হলে ওই দিন অবাঙালি নেতা শওকত ডাক্তারের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। এতে শওকত ডাক্তারের পরিবারের ৫ সদস্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এ খবর ছড়িয়ে পরলে সৈয়দপুর আর্মি ক্যাম্প থেকে খান সেনারা ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে এবং বাঙালিদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগসহ জ্বালাও পোড়াও করা হয়। ওই সময় তৎকালীন শিক্ষক মফিজ উদ্দিন হাছান মাহাবুব নবাব এর নেতৃত্বে এলাকার যুবক ও ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় মুক্তি বাহিনী। সেই মুক্তি বাহিনী দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ওই বছর ৪ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীসহ ফুলবাড়ী শত্রু মুক্ত হয়। এরই মধ্যে খান সেনাদের হাতে প্রাণ হারায় আনেক মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষ। এমদাদুল হক মিলন/এসএস/আরআইপি

Advertisement