করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের যেমন বড় আকারে ক্ষতি হয়েছে তেমনি উন্নতির ধারারও যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটেছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জ্ঞানের চলমান গতিতে বাঁধা, তারপর সামাজিকতা বন্ধ এবং শেষে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান এবং তাও দীর্ঘদিন ধরে।
Advertisement
মানুষ সামাজিক জীব তাকে ঘরে বন্দি করে রাখা আর চিড়িয়াখানায় বন্যপশুদের আটকে রাখা একই কথা। সুইডেন একমাত্র দেশ চেষ্টা করেছে ব্যতিক্রমভাবে সমস্যার মোকাবিলা করতে। খুব একটা ভালো ফলাফল বহন করতে না পারলেও শিক্ষা প্রশিক্ষণ চালু রাখতে চেষ্টা করেছে।
মানসিক দিক দিয়ে অনেকেই কিছুটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এ ক্ষতি পূরণ হতে সময় লাগবে। এত কিছুর পরও ব্যতিক্রম কিছু রয়েছে এবং সেটা বাংলাদেশে ঘটে চলছে। ছেলেটিকে আমি চোখে দেখিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তার সঙ্গে আমার পরিচয়।
আমার লেখা বা ছোট খাটো ভিডিও ফেসবুক বা খবরের কাগজে সে দেখেছে। সেভাবেই পরিচয়, আমি চেষ্টা করি নতুন প্রজন্মদের নানাভাবে অনুপ্রেরণা দিতে। ছেলেটির বয়স সবে শতরে। আর দশজনের মতো সময়টি সেও পার করতে পারত, কিন্ত না সে কিছুটা ভিন্নভাবে ডিজিটালকে কাজে লাগিয়েছে।
Advertisement
হয়ত সঠিক বা ইউনিক কিছু উদ্ভাবন করতে পারেনি তবে কিভাবে নতুন চিন্তা চেতনার উদয় হলে তার জন্য গুগলে রিসার্স করে সে তথ্য জোগাড় করা যায় এবং সারমর্মে উপনীত হওয়া সম্ভব তা সে প্রমাণ করেছে। আমাকে সে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে লেখে।
সোনার বাংলায় গোলাম সারওয়ার সাইমুমের মতো আরও অনেক প্রতীভা রয়েছে যা আমরা জানি না। একটু সহানুভূতি পেলে তারাও যে একদিন নোবেল পুরস্কার পেতে পারে এমনটি স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কী? তার চিঠিখানা হুবহু তুলে ধরলাম শেয়ার ভ্যালুর কনসেপ্ট থেকে।
স্যার,
আপনাকে কথা দিয়েছিলাম যে চোখ নিয়ে করা ওই গবেষণায় কী হয় সেটা আগে আপনাকে লিখে পাঠাব। এখানে সেটাই করছি। আমি চোখ দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট উজ্জ্বল বিন্দু স্বরূপ বস্তুকে চলাচল করতে দেখতাম। এগুলো দেখতাম মহামারির অনেক আগে থেকেই।
Advertisement
এসব সম্পর্কে বিশেষ কোনো উত্তর ছিল না আমার কাছে কিন্তু প্রশ্ন ছিল অনেক। এখন করোনা মহামারিতে স্কুল কলেজ বন্ধ হওয়ার পর এটা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা করার সময় পাই। আসলে এই দীর্ঘ ছুটিতে অনেক কিছু ইচ্ছা পূরণ হয় যেগুলো (গোল্ডেন এ প্লাস পেতেই হবে এমন) লেখাপড়ার চাপে আগে পূরণ হয়নি।
যেমন আপনাকে আগে পাঠানো লেখাগুলো লেখার সুযোগ পেয়েছি। সে রকমই একটা লুকিয়ে থাকা ইচ্ছা ছিল বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের লেখা বই পড়া। একদিন স্টিফেন হকিংয়ের এক বইয়ে ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ এ ‘ফোটন’ কণার বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা পড়ি যা আমার চোখে দেখা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। যদিওবা এটা আমার ভুল ভাবনাই ছিল। মূলত এটাই আমার মনে আগ্রহ বাড়ায় ওগুলো নিয়ে আরও চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আর এখান থেকেই চোখে দেখা কণাগুলো নিয়ে আমার গবেষণা ভুল দিকে হাঁটতে থাকে। আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স, পার্টিকেল ফিজিক্স এবং অন্যান্য এ রকম ক্ষুদ্র কণা নিয়ে লেখা বইগুলো পড়তে থাকি।
কিন্তু ওগুলোর অধিকাংশ বিষয় আমার বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই ওগুলো আমার জ্ঞানের বাইরের বিষয়। ৩০ মে আমার ১৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই বয়সে এসব বই কল্পনা করাই আমার জন্য অনেক কঠিন বিষয়। এসব বইয়ে আমি যে বিষয়গুলোর উত্তর খুঁজছি সেগুলোর কিছুই পেলাম না।
তাই বাধ্য হয়ে আবার ইন্টারনেট এ প্রশ্নোত্তর এর খোঁজ শুরু করলাম। এবার চোখের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করলাম। এবার চোখের সমস্যা নিয়ে লেখা অনেক আর্টিকেল পড়লাম। রেটিনাসহ চক্ষু বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই পড়লাম। এটার ফলে আশ্বস্ত হলাম যে আমার বড় কোনো চোখের সমস্যা নাই।
চোখের গঠন, লেন্সের বৈশিষ্ট্য ও কাজ পড়ার মাধ্যমে অবাস্তব প্রতিবিম্বের (or Unreal Projection) মতো কিভাবে আমি ওগুলো আকাশে দেখতে পাই সেই বিষয়ে অনেকগুলো আন্দাজ চলে এলো।
একদিন আমেরিকার ‘ইউনিভার্সিটি অব ইলিনৈস’ এর ওয়েবসাইট খুঁজে পেলাম এবং দেখলাম আমার মতই আরো ২৭ জন ব্যক্তি বিভিন্ন দেশ থেকে একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এবং এর সঠিক উত্তর চেয়েছেন। এক জায়গায় উত্তর হিসেবে ‘‘Blue field entoptic phenomenon’’ এর কথা বলা হয়েছে।
এবার এটা নিয়েও গবেষণা শুরু করলাম। আগে স্টিফেন হকিংয়ের কথাগুলো মাথায় গেঁথে যাওয়ায় সহজে এই সঠিক গবেষণাটিকে গ্রহণ করতে পারিনি। ভুলটা আমারই ছিল। তিনি বলেছেন অন্য কথা আর আমি বুঝে ফেলেছি অন্য কথা। শেষে অনেক কষ্টের পর নিজে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ‘‘Blue Field Entoptic phenomenon’’
বিষয়টিকেই আবার নতুনভাবে প্রমাণ করলাম নিজের কাছে। ‘আমার চোখে দেখা ওই ছোট্ট উজ্জ্বল কণাগুলো হচ্ছে শেত রক্তকণিকা। ওগুলোর অবস্থান হচ্ছে রেটিনার সামনে। ওগুলো কৈশিক নালিকার ভেতর দিয়ে চলাচল করছে।’
মূল কথা হচ্ছে শুরুতে ভুল করে বিষয় একটা মাথায় গেঁথে যাওয়ার কারণে অনেক কষ্ট করে আগে করা একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণা আবার নতুন করে নতুন পদ্ধতিতে প্রমাণ করলাম নিজের কাছে। যদিও বা এটার কোনো মানে নেই কারণ আগেই একজন এটা নিয়ে গবেষণা সেরে ফেলেছেন। কিন্তু আমার এতে দুঃখ নেই বললেই চলে কারণ এতে আমি নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
‘স্যার, অনেক সংক্ষিপ্ত করে বললাম কিন্তু এখানে লুকিয়ে আছে আমার দীর্ঘ সময়ের কঠোর পরিশ্রম পূর্ণাঙ্গ ঘটনাগুলো এর থেকে আরো অনেক বিস্তৃত’
এখানে আমার পিতা-মাতার কথা বলতেই হচ্ছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে এ রকম পিতা-মাতা পেয়েছি। আমাদের পরিবার আগে অনেকগুলো ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। কিন্তু বিভিন্নভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণে আমাদের পারিবারিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।
আল্লাহ চাইলে হয়তো বেশি দিন লাগবে না আবার স্বাভাবিক হতে। কিন্তু এত কিছুর পরেও আমার পিতা-মাতা শিক্ষার ক্ষেত্রে আপস করতে রাজি নন। আমার লেখারপড়া জন্য ধার-দেনা করতেও দ্বিধা করেননি। যে মোবাইলের সাহায্যে আমি এত কিছু শিখতে পেরেছি বা পারছি পরবর্তীতে জানতে পারি সেই টাকা নাকি ধার করা।
জানি না আমার বই কেনার টাকাগুলো কিভাবে জোগাড় করেছেন তারা। কষ্ট লাগে কিন্তু কিছুই করতে পারি না। তারা সাপোর্ট না দিলে এসবের কোনো কিছুই হয়তো সম্ভব হত না। ‘এখানে অনেক কথা লুকিয়েছি কারণ সব বলার মতো না’
The things I could confirm by my research are: 1. Those tiny flashy things are not floaters caused by posterior vitreous detachment.2. These are not air molecules.3. First I thought only I see this. But now, I could find other people from around the world who also witness the same thing.4. These things have connections with retina, lens and brain's complex visual processing system. 5. These are inside my eyes but I see them in the sky because of an unreal projection created by the lenses and brain's complex visual processing system.6. Blue field entoptic phenomenon theory is absolutely correct. Those tiny flashy things I see are caused by White blood cells. Their trajectories in front of the retina causes this. Those white blood cells move through the capillaries.
‘স্যার, খুব দ্রুত লেখাগুলো লিখলাম। অনেক ভুল হয়ে থাকতে পারে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
‘‘Sir, originally I am sending this email to you as a personal message. But if you wish you can use this information for publication purposes.’’ Md Golam Sharoar Saymum, Student, Rangpur Government College, Rangpur.
সাইমুমের পুরো লেখাটি তুলে ধরলাম শুধুমাত্র সবার অবগতির জন্য। কারণ সাইমুমের বয়সে তার ভাবনাকে যদি সে বাস্তবে রূপ দিতে পারে তবে করোনা যে শুধু অভিশাপ বয়ে এনেছিল সেটাই পরের প্রজন্ম জানবে না। তারা জানবে সাইমুমের অক্লান্ত কষ্ট এবং ত্যাগের বিনিময়ে জন্মেছিল বৈজ্ঞানিক চিন্তা।
এখানেই শেষ নয় জাগো বাংলাদেশ জাগো, নতুন করে ভাবো। সাইমুমের মতো তোমাদের মাঝে নতুন চেতনার বন্যা বইয়ে দিক। তোমরাও একদিন অনেক বড় হও আর তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে সাইমুমের মতো করে এমনি আশার বাণী লিখে রেখে যাও।
এমআরএম