নাম তার আলিম আল রাজী আজাদ। ভবঘুরে অনাহারী মানুষের ‘খাদ্য দাতা’ হিসেবে ফরিদপুরের সবার কাছে পরিচিত একটা নাম। প্রতিদিন ভোর হতেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শহরে। ছুটে যান রেলস্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, ট্রাক স্ট্যান্ড, কোট চত্বর, জনবিক্রির হাট কিংবা বস্তিতে।
Advertisement
উদ্দেশ্য ছিন্নমূল অসহায় মানুষকে খোঁজা। তাদের হাতে তুলে দেন রান্না করা খাবার। প্রতিদিন কয়েকশ মানুষকে তিনি ঘুরে ঘুরে বিতরণ করছেন রান্না করা খিচুড়ি কিংবা পোলাও। এভাবেই অনাহারী মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়াটাই যেন তার নেশায় পরিণত হয়েছে।
আলীম আল রাজী আজাদের বাড়ি ফরিদপুর শহরের কমলাপুর এলাকায়। বাবা-মায়ের বড় সন্তান। ইচ্ছে ছিল ছেলে অনেক বড় নামকরা ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেভাবেই চলছিল তার পড়ালেখা। ২০০১ সালে মাস্টার্স শেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে যোগ দেন। কিন্তু সেই চাকরি তার কাছে ভালো লাগেনি।
স্বাধীনভাবে কাজ করার চিন্তাধারায় ৭ বছর পর সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ নিয়েই নেমে পড়েন মানবতার সেবায়। প্রথম দিকে বিভিন্ন বাসা-বাড়ির বেচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে বিলিয়ে দিতে থাকেন অসহায় দরিদ্রদের মাঝে। পরবর্তীতে তার বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে এবং নিজের উপার্জন থেকে কিছু টাকা দিয়ে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তার কার্যক্রম।
Advertisement
শুধুমাত্র ছিন্নমূল হতদরিদ্রদের খাবার দেয়ার মধ্যেই তার কাজের সীমাবদ্ধতা নেই। সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া এ যুবক যখনই শুনতে পান কেউ বিপদে পড়েছে ছুটে যান সেখানে। কারও রক্ত লাগবে, কারও পড়ালেখার খরচ নেই, কেউবা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না টাকার অভাবে। আলিম আল রাজী আজাদ যেন তাদেরই একমাত্র সম্বল।
কারও ঘর নেই, নেই উপার্জন করার কোনো কিছু, টাকার অভাবে কেউ মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না, কোনো মসজিদ-মাদরাসায় আসবাবপত্র নেই সেখানেও হাজির হন তিনি। দুস্থ ও বিধবা নারীদের সেলাই মেশিন প্রদান, হতদরিদ্রদের ঘর তুলে দেয়া, দরিদ্র মানুষকে কর্মসংস্থানের জন্য ভ্যান কিনে দেয়াসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি পাওয়া এই যুবকটি গত বছর করোনার পর থেকে কয়েকশ মানুষকে চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেই খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদ-পূজোয় হতদরিদ্র ছিন্নমূল নারী, শিশুদের মাঝে বস্ত্র বিতরণও করেন।
আলীম আল রাজী আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি মানবিক কাজে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানবতার ভাইবোন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাদের সেই সহযোগিতায় আমি দরিদ্র মানুষের মাঝে পৌঁছে দেই।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবন হতদরিদ্র মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। প্রতিদিন এভাবে দরিদ্র মানুষ খুঁজে বের করে তাদের সহায়তা করে চলছি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যতদিন সুস্থ রাখবেন, ততদিন মানুষের জন্য আমার এই ছুটে চলা অব্যাহত রাখব।’
এসজে