সরকারি সহায়তা নেয়ার পর কৃষকদের অধিকাংশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয় না। সঞ্চয়ও করেন না কৃষকরা। এ কারণে রাজশাহীতে কৃষকদের অনেক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অচল পড়ে রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ২০১৯-২০ সেশনের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, পুরো জেলায় ১২ হাজার ৩০ জন কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অচল। অন্যদিকে, মোবাইল ব্যাংকিং সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা ব্যাংকে লেনদেন কমিয়েছেন।
Advertisement
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৬। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬০ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তাদের মাঝে ১ লাখ ৪৭ হাজার কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বর্তমানে সচল, বাবিগুলো অচল পড়ে আছে।
এর মধ্যে গোদাগাড়ী ও মোহনপুরে সর্বোচ্চ সংখ্যক কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অচল। গোদাগাড়ী উপজেলার ৬ হাজার ২ জন কৃষকের অ্যাকাউন্ট সচল নেই। মোহনপুরে ৩ হাজার ৮৮৩ জন, পবায় ৪৫১, তানোরে ২০৬ জন, দূর্গাপুরে ৮৯১ জন, চারঘাটের ৫৫১ জন কৃষকের অ্যাকাউন্ট সচল নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সরকারের দেয়া বিভিন্ন ভর্তুকি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকের হাতে সহজে পৌঁছে দিতে এবং কৃষকের সাধ্যমতো ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়। কৃষকরা মাত্র ১০ টাকা জমা দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ও তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকের যেকোনো শাখায় হিসাব খুলতে পারেন। তবে শুরুতে জনপ্রিয়তা পেলেও এখন অনেক অ্যাকাউন্টই অচল।
Advertisement
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক কাইয়ুম আলী জানান, দু’বছর আগে লোন নিতে জনতা ব্যাংকে ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। লোনের টাকা উঠানোর পর ওই অ্যাকাউন্টে আর লেনদেন করেননি। সঞ্চয় রাখার মতো অতিরিক্ত অর্থ নেই বলেও জানান। তবে প্রয়োজনের লেনদেন সারেন মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে।
সচল না থাকার কারণ হিসেবে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষকের সঞ্চয়ের মতো অর্থ থাকে না। তাই সরকারি প্রণোদনা, পুনর্বাসন, কৃষকের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী বাবদ ভাতা দেয়ার সময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো সচল হয়। অন্য সময় সেগুলো অচল হয়ে পড়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সহজলভ্য হওয়ায় লেনদেনের জন্য অনেকেই ব্যাংকে যেতে চান না। টুকটাক লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেরে নেন। এর একটি প্রভাবও রয়েছে।
সালমান শাকিল/এমএইচআর
Advertisement