ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চর মদনপুরে বিধ্বস্ত হয়েছে বসতি ঘর, রাস্তাঘাট ও গাছপালা। জোয়ারে ভেসে গেছে গৃহ সামগ্রী, গবাদি পশু, হাস-মুরগি, পুকুর ও ঘেরের মাছ। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর। এখন সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় তারা।
Advertisement
মদনপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মদনপুর গ্রামের মো. জামাল জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানির চাপে তার বসত ঘর ভেঙে গেছে। বর্তমানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে ভাঙা ঘরটিকে মেরামত করবেন।
আমেনা বেগম ও চাঁদ নেহার বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, জামা-কাপড়, চাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। টাকার অভাবে আমরা চাল ও রান্নার সামগ্রী কিনতে পারছি না। আমরা খুব অসহায় জীবন যাপন করছি।
মদনপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর পাতা গ্রামের মো. রফিক মাল জানান, তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ একর জমিতে মাছের ঘের করেছিলেন। জোয়ারের পানিতে তার ঘেরের ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এখন তিনি এনজিওর ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে।
Advertisement
তিনি আরও জানান, দেনার ভয়ে এখন তার পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকার সহযোগিতা করলে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন।
ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন জানান, তাদের এলাকা থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসার একটি মাত্র রাস্তা রয়েছে। কিন্তু জোয়ারের পানিতে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এখন যাওয়া আসার সময় হাঁটু সমান কাটা পার হতে হয়।
মদনপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সংসারের হাল ধরেন তিনি। মহিষ, ছাগল ও ভেড়া পালন করে অনেক কষ্টে সংসার চালান। কিন্তু জোয়ারের পানিতে তার আয়ের উৎস গবাদি পশু ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ঘরের সামনে বসে চোখের পানি ফেলছেন। আর সরকারি সহযোগিতার অপেক্ষায় রয়েছেন।
মদনপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল খালেক জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানিতে অনেক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে গৃহ সামগ্রী, পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া মহিষ, গরু, হাস-মুরগি, ছাগল, ভেড়াও ভেসে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা করা হবে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসজে/জেআইএম