এনেসথেসিওলজিস্টের তীব্র সংকটে ভুগছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। প্রয়োজনীয় সংখ্যক এনেসথেসিওলজিস্টের অভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা ও উপজেলায় অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও প্রশিক্ষিত সার্জন থাকা স্বত্ত্বেও এনেসথেসিওলজিস্টের না থাকায় সার্জনরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেক্টরে প্রায় দুই লাখ জনবলের মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে এনেসথেসিওলজিস্টের পদের সংখ্যা মাত্র ১১শ’। মোট পদের মধ্যে অধ্যাপকের পদের সংখ্যা মাত্র ১৭টি। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক পদে অধ্যাপক পদের দ্বিগুণ ও সহকারী অধ্যাপক পদে অধ্যাপকের তিনগুণ পদ রয়েছে। অবশিষ্ট পদগুলো এন্ট্রি লেবেলের এমবিবিএস ডাক্তারের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে সারাদেশে এনেসথেসিওলজিস্টের শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শ’। শূন্যপদের সংকট ছাড়াও অন্য বিষয়ের চিকিৎসকরা তদবির ও প্রভাব খাটিয়ে এনেসথেসিওলজিস্টের পদগুলো দখল করে রাখছেন।নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এনেসথেসিওলজিস্টের সংকটের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এসেছে। স্বাস্থ্য সেক্টর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আগ্রহের কারণে তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছেন ওটি (অপারেশন থিয়েটার) থাকলেও অধিকাংশ উপজেলা পর্যায়ে সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশে এনেসথেসিওলজিস্ট সংকট দূর করতে এনেসথেসিয়া বিষয়ে কর্মরত ডাক্তারদের ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে এনেসথেসিওলজিস্টের বিভিন্ন তথ্য ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি/ডিপ্লোমা ডিগ্রির বিবরণ,পাসের সন, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম ও পদবী ইত্যাদি সংগ্রহ করছে মন্ত্রণালয়। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুর রহমান বলেন, সারাদেশে অধ্যাপকের পদ রয়েছে মাত্র ১৭টি। সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে শীর্ষ পদের সংখ্যা ১শ’য়েরও কম।তিনি বলেন, শীর্ষ পদে পদোন্নতির সুযোগ খুবই কম থাকায় এমবিবিএস ডাক্তাররা কেউ এ বিষয়ে পড়াশুনা করতে তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না। এন্ট্রি লেবেলে কেউ চাকরিতে প্রবেশ করলে তাকে জুনিয়র কনসালটেন্ট হতে হলেও স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। এত কষ্টের পরও যখন সে উপরের পদে পদোন্নতি কত বছর পর পাবেন সে সম্পর্কে নিশ্চয়তা পান না তখন আর এমুখো হতে চান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর আরেকটি সরকারি হাসপাতালের এনেসথেসিওলজিস্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জানান, ২০০৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক হলেও পদ শূন্য না হওয়ায় তিনি এখনও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাননি। তার বেশ কয়েকজন সহকর্মী অধ্যাপক না হওয়ার বেদনা নিয়ে চাকরি থেকে ইতোমধ্যেই অবসরে চলে গেছেন বলেও জানান। একাধিক সিনিয়র এনেসথেসিওলজিস্ট এ প্রতিবেদককে জানান, এনেসথেসিওলজিস্টের পদ সংকট দূর করতে এ বিষয়ে চিকিৎসকের পড়াশুনায় আগ্রহী করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। তারা বলেন, উন্নত বিশ্বে এখন এনেসথেসিওলজি বিভাগ বলতে কোনো বিভাগ নেই। কারণ এখন এনেসথেসিওলজিস্টরা শুধুমাত্র রোগীকে অজ্ঞান করার কাজই করেন না। তারা অজ্ঞান করার কাজের পাশাপাশি আইসিইউ পেইন ম্যানেজমেন্ট ও প্যালিয়েটিভ রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। তাই এখন এনেসথেসিওলজি বিভাগকে এনেসথেসিয়া, পেইন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পেলিয়েটিভ নামকরণ করা হয়ে থাকে।তারা বলেন, অধ্যাপকসহ শীর্ষ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি, এডহকভিত্তিতে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ ও বিভাগের নাম পরিবর্তন করে কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নামকরণ করার উদ্যোগ নিলে এ সংকট বহুলাংশে হ্রাস হবে আশাবাদী তারা। এমইউ/এসকেডি/এসএইচএস/পিআর
Advertisement