তথ্যপ্রযুক্তি

ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নিয়ে যা বললেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী

ইন্টারনেটের জগতে কিছুই বন্ধ করা যায় না জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধের শত শত দাবি যদি ওঠে, আবার তা চালু রাখারও দাবি ওঠে। আমি কোন দাবিটা শুনব? আমি আজকে বন্ধ করে দেব, কিন্তু ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) বন্ধ করবে কে? আমরা ফেসবুক বন্ধ করেছিলাম, কিন্তু ভিপিএন দিয়ে ফেসবুক চলেছে।’

Advertisement

শনিবার (২৯ মে) দুপুরে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।

অনেক ছেলেমেয়ে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এই গেম কীভাবে বন্ধ করা যায়— এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না কেন? অদক্ষতা আপনাদের। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল আছে সেটা ইউজ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইন্টারনেটের জগতে কিছুই বন্ধ করা যায় না। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা—এটা কোনো সমাধান না। কতটুকু গেম খেলা উচিত, কতটুকু আড্ডা দেয়া উচিত, কতটুকু বাইরে যাওয়া উচিত, কতটুকু ঘরে থাকা উচিত; আপনি যদি আপনার সন্তানকে এটুকু কনভেন্স (বোঝানো) করতে না পারেন, ইটস ইউর ফেইলার (এটা অভিভাবকদের ব্যর্থতা)।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না বন্ধ করাটা সমাধান। আমি এই জায়গাটায় এখন পর্যন্ত একমত হতে পারি না। আমাদের এখানকার গার্জিয়ানরা (অভিভাবকরা) সেই পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন নয়, এ কারণে ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়।’

অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা আর কোনো কারণে নষ্ট হয় না? তারা যখন সিগারেট খায় তখন নষ্ট হয় না? যখন মাদক নেয় তখন নষ্ট হয় না? ওগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন না কেন? এটার পেছনে কেন লেগে গেছেন এবং গেমের কারণে কী জন্য ইন্টারনেটের সুবিধা থেকে ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করবেন? আপনাদের সমস্ত জেনারেশন খোঁজেন। কোন জেনারেশন গেম খেলে নাই? আমাদের তো ভিডিও গেমসের দোকান ছিল। আইডিবি ভবনের কম্পিউটার দোকান থেকে সিডি পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এখন প্রশ্ন তুলবেন, গেমে নেশা হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো কিছুতেই নেশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। সন্তান ফেসবুকের কোন সাইটে যেতে পারবে না পারবে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কতক্ষণ থাকতে পারবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেগুলো না করে মাথা কাটার পথ ধরেছেন কেন?’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ফাইল ছবি

তিনি বলেন, ‘উল্টাপাল্টা চিন্তা করার চাইতে লেট দেম গ্রো (ছেলেমেয়েদের বড় হতে দিন)। আমাদের মাননীয় তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা (সজীব ওয়াজেদ জয়) বন্ধ করাকে কখনোই সমাধান মনে করেন না। এর আগে একবার ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছিল, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন এটা না করার জন্য।’

Advertisement

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কিছু খারাপ থাকলে আমরা চেষ্টা করব যাতে সেটাকে কন্ট্রোল করা যায়। কিন্তু বন্ধ করে দিয়ে কিছু করা যায়, এটা আমি মনে করি না। এখানে আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় ভূমিকা অভিভাবকদের। তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে এগুলো কোনো সমস্যা না।

তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে—এরকম একটা কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ছেলেমেয় এত সহজে নষ্ট হয় না। নিজের সন্তানের ওপর আস্থা রাখেন। আপনার সন্তান যখন গেম ছেড়ে দেয়ার তখন ছেড়ে দেবে।’

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধ করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংসদীয় কমিটির কোনো মিটিং হয় না। আর সংসদীয় কমিটি কোনো সুপারিশ করলে আমাকে ডেকে নিয়ে তো সুপারিশ করবে। আমাদেরকে বলবে। আমাদের আলোচ্যসূচির মধ্যে এগুলো ছিল না। সুতরাং এসব বলে কোনো লাভ নেই।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম দুটি নিয়ন্ত্রনের দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সরকার যখন সহজলভ্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ঠিক তখন আগামী তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিপথগামী হয়েছে, যা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এজন্য গেম দুটি নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনটি।

এইচএস/এমএসএইচ/জিকেএস