সুনিশ্চিত জান্নাত পেতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দুইটি আমল খুবই সহজ। কিন্তু আমল দুইটি করার মতো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কেন আমল দুইটি করা হয় না তা-ও বলেছেন বিশ্বনবি। সেই আমল দুইটি কী এবং তা না করার কারণই বা কী?
Advertisement
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুইটি বিষয় বা দুইটি অভ্যাসের (আমলের) প্রতি যে মুসলিম (নিয়মিত) খেয়াল রাখবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস (আমল) দুইটি সহজ কিন্তু তার আমলকারীর সংখ্যা খুবই কম।তাহলো-১. প্রত্যেক (ওয়াক্তের ফরজ) নামাজের পর ১০ বার (سُبْحَانَ الله) ‘সুবহানাল্লাহ’; ১০ বার (اَلْحَمْدُ لله) ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ এবং ১০ বার (اَللهُ اَكْبَر) ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। (ফলাফল)-> এতে মুখে (প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে) ১৫০ বার জিকির হবে আর আল্লাহর কাছে আমলনামায় ১ হাজার ৫০০ সাওয়াব (লেখা) হবে।
২. (রাতে) বিছানায় শোয়ার পর ৩৪ বার (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার’; ৩৩ বার (اَلْحَمْدُ لله) ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ এবং ৩৩ বার (سُبْحَانَ الله) ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। (ফলাফল)-> এতে (প্রত্যেক রাতে) মুখে ১০০ বার জিকির হবে আর মিজানের পাল্লায় এ জিকির ১ হাজার সাওয়াব (লেখা) হবে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি।(আমল না করার কারণ প্রসঙ্গে)সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অভ্যাস (আমল) দুইটি সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোনো লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর নামাজের মধ্যে (নামাজ শেষ হলে) শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা (ব্যস্ততা) স্মরণ করিয়ে দেয়। এতে সে তাসবিহগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের/ব্যস্ততার দিকে চলে যায়।’ (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, তারগিব)
Advertisement
উল্লেখ্য, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ মেয়ে হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্য এ তাসবিহগুলো পড়াকে উত্তম বলেছেন। হাদিসে এসেছে-হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ হাতে যাতা ঘুরাতে এবং সংসারের সব কাজ একা করতে কষ্ট পেতেন। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে পরামর্শ দেন যে, তোমার আব্বার কাছে যুদ্ধলব্ধ একটি দাসী চাও, যে তোমাকে সংসারের কাজে সাহায্য করবে।তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দেখা করতে এসে তাঁকে না পেয়ে (বাড়ি) ফিরে যান। রাতে তাঁরা বিছানায় শুয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের কাছে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার আসহাবে সুফফার দরিদ্র সাহাবাদের বাদ দিয়ে তোমাকে কোনো দাসী দিতে পারব না। তবে দাসীর চেয়েও উত্তম বিষয় (আমল) তোমাদের শিখিয়ে দিচ্ছি-‘তোমরা যখন বিছানায় (ঘুমাতে) যাবে, তখন- ৩৩ বার (سُبْحَانَ الله) ‘সুবহানাল্লাহ’; ৩৩ বার (اَلْحَمْدُ لله) ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ এবং ৩৪ বার (اَللهُ اَكْبَر) ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।’ (বুখারি, মুসলিম, ফাতহুল বারি)
সুনিশ্চিত জান্নাতে যেতে মুমিন মুসলমানের জন্য এ আমলগুলো খুবই সহজ। শয়তানের প্ররোচনার কারণে সংখ্যা কম ও সহজ হওয়া সত্ত্বেও অল্প সংখ্যক মানুষই এ আমল করে থাকে। অথচ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরুত্বপূর্ণ সহজ এ আমলটি নিজ মেয়ে হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকেও শিখিয়েছেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসে উল্লেখিত সহজ এ আমল দুইটি নিয়মিত করা। শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকা। সুনিশ্চিত জান্নাত পেতে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। সহজে জান্নাতে যেতে হাদিসে ঘোষিত আমল দুইটি নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Advertisement
এমএমএস/এমএস