রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে বিদেশে আম রফতানি শুরু হয়েছে। সেই রফতানিকৃত আমের প্রথম চালানটি যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে।
Advertisement
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও ফল গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরামর্শে আমের উৎপাদন, বিপণন ও প্যাকেজিং এর মাধ্যমে উন্নত জাতের খিরসাপাত আম যুক্তরাজ্যে পাঠানো হচ্ছে।
শনিবার (২৯ মে) সকালে জাগো নিউজকে কনট্রাক্ট ফার্মা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার (২৮ মে) বিকেল সাড়ে ৫টায় তিন টন খিরসাপাত আমের প্রথম চালান চারঘাটের পাকুড়িয়া থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শনিবার ঢাকার শ্যামপুরে সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউজ আমগুলোকে যাচাই-বাছাই করে ক্লিয়ারেন্স দিবে। এরপর ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আমের প্রথম চালান যুক্তরাজ্যে পৌঁছাবে’।
বিদেশে আম রফতানির বিষয়ে শফিকুল বলেন, ‘রাজশাহীর আম যাচ্ছে বিদেশে। এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে? করোনার কারণে গত মৌসুমে আম পাঠানো সম্ভব হয়নি। এবছর চাষিরা বিদেশ আম পাঠাতে পারছেন। এতে দেশের অর্থনীতিতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারব।’
Advertisement
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আম রফতানির জন্য উপজেলার ২০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাগানে উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত আম ঢাকায় বিএসটিআই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরপর রফতানি করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘আমে যাতে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ীরা ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করেছেন। এতে খরচ বাড়লেও একদিকে আমের গুণগত মান বেড়েছে, অন্যদিকে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা বেশি দামে আম কিনছেন’।
‘জেলার অন্য উপজেলার তুলনায় বাঘা-চারঘাটে সবচেয়ে গুণগতমানের বেশি আম উৎপাদন হয়। এখানকার আম আরও উন্নত পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে বলেই রফতানি হচ্ছে’।
শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এ বছর বাঘা থেকে প্রায় ৩০০ টন আম রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে। গত বছর এখান থেকে আম রফতানি হয়নি। এর আগের বছর ৩৫ টন আম রফতানি হয়েছিল। রাজশাহী জেলায় উৎপাদিত আমের অর্ধেক উৎপাদিত হয় বাঘায়। এখানে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়।
Advertisement
এদিকে রাজশাহী সেনানিবাসের পাশে পাঁচ বিঘা আয়তনের একটি আমবাগানে ফ্রুট ব্যাগিংয়ের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
মেয়র লিটন বলেন, রাজশাহীর আম ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে, রাজশাহী কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ অঞ্চলে কৃষিপণ্যভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হক জানান, তাদের সংগঠনের ২০০ জন সদস্য এবার কমপক্ষে ৫০ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করবেন। উৎপাদন হবে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন আম। এরমধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে।
তিনি বলেন, আম রফতানি করতে হলে অবশ্যই ফ্রুট ব্যাগিং করতে হয়। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম নিরাপদ, বালাইমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, রাজশাহীতে এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ফ্রুট ব্যাগিং ব্যবহার বেসরকারি পর্যায়ে হয়ে থাকে। তাই কত আমে ব্যাগিং হচ্ছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে আমরা সবসময় চাষিদের ফ্রুট ব্যাগিং করে আম উৎপাদনে উৎসাহ দিয়ে থাকি। রফতানি না হলেও বেশি দামে দেশেই বিক্রি করা যায়। অনেক মানুষ আছেন যারা টাকা বেশি লাগলেও নিরাপদ আমটি খেতে চান।’
ফয়সাল আহমেদ/এসএমএম/এমএস