এখন জামের মৌসুম। বাজারে এখন জাম সহজলভ্য। টক-মিষ্টি স্বাদের ছোট ছোট কালো জাম দেখলেই জিভে পানি চলে আসে নিশ্চয়ই! জাম ভর্তার স্বাদ সবারই জানা। জানেন কি? শুধু স্বাদে নয় বরং জামের আছে অনেক গুণ। হাজারো স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে জামের।
Advertisement
জামে অনেক পুষ্টিগুণ আছে। ভিটামিন সি, আয়রন, পটাসিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান আছে জামে। পেটে ব্যথা, ডায়াবেটিস এবং বাতের ব্যথা সারাতে জাম কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও এই ফল আমাশয় এবং পেট ফাঁপাসহ হজমজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করে। জেনে নিন জামের বিভিন্ন উপকারিতাসমূহ-
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো: জামে কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে, যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীর দুর্বলতা, ঘন ঘন তৃষ্ণা এবং প্রস্রাবের লক্ষণগুলোও নিরাময় করে।
জামে কোনো সুক্রোজ নেই এবং এতে জাম্বলিন আছে, যা স্টার্চকে রক্তে চিনিতে রূপান্তরিত করতে বাঁধা দেয়। জামের মধু ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
Advertisement
শরীর ঠান্ডা রাখে: একটি জামে ৮৮ শতাংশ মিনারেল থাকা। এ ছাড়াও ফসফরাস এবং আয়োডিনের মতো খনিজগুলো একসঙ্গে থাকায় জাম খেলে শরীর আর্দ্র থাকে। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে জাম খাওয়া উচিত।
সকালের নাস্তায় ২ কাপ বিচি ছাড়া জাম, ১ কাপ পানি এবং ১ কাপ বরফ মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে নিন। এর সঙ্গে কালো মরিচের গুঁড়ো, লবণ, মধু এবং পুদিনা দিয়ে মজাদার এক শরবত তৈরি করে খেলে সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: জামে আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ এবং বি-৬। সেইসঙ্গে এটি ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ। আরও আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
মোটকথা, জামে থাকা বিভিন্ন গুণাগুণ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়াও জামে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
Advertisement
হাড়কে শক্তিশালী করে: জামে আছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপদানসমূহ। যা হাড় এবং আমাদের দাঁত মজবুত করে।
এজন্য এক গ্লাস দুধের সঙ্গে আধা চা চামচ শুকনো জামের গুঁড়ো খেতে পারেন। এ ছাড়াও প্রতিদিন ছোট এক বাটি জাম খেতে পারেন। এতেও উপকার মিলবে দ্রুত।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: জামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধি সারাতেও কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে, জামে থাকা পলিফেনলের কারণে এটি অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত। নিয়মিত জাম খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়।
রক্ত পরিশোধিত করে: জামে থাকা আয়রন এবং ভিটামিন সি রক্ত পরিশোধন করতে সহায়তা করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়।
সংক্রমণ রোধ করে: জামে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফেকটিভ এবং অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া বৈশিষ্ট্য আছে। এ ফলের মধ্যে ম্যালিক অ্যাসিড, ট্যানিনস, গ্যালিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং বেটুলিক অ্যাসিডও আছে। বিভিন্ন সংক্রমণ রোধে এই ছোট্ট ফলটি কাজ করে।
ব্রণ দূর করে: জামে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা ব্ল্যাকহেডস, পিম্পলস এবং ব্রণসহ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে। রক্ত পরিশোধিত হওয়ার কারণেই ত্বক পরিষ্কার হয়ে যায় জাম খেলে। ত্বকের পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায় জাম।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়: জামে উপস্থিত পটাসিয়াম এবং ফসফরাসজাতীয় প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানসমূহ হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে জাম। এতে থাকা উপাদানসমূহ ধমনীগুলোকে সুস্থ রাখে এবং শক্ত হতে দেয় না।
হজমক্ষমতা বাড়ায়: জামে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার আছে, যা লিভারকে সক্রিয় করে এবং হজমক্ষমতা বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দূর করে জাম।
জাম খাওয়ার আগে যেসব সতর্কতা মানা জরুরি-
>> প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি জাম খাবেন না।>> জাম খাওয়ার আগে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।>> খালি পেটে কখনো জাম খাবেন না।>> জাম খাওয়ার আগে ও পরে প্রায় ২ ঘণ্টা দুধ খাবেন না।>> গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জাম না খাওয়াই ভালো।>> ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই জাম অল্প পরিপাণে খাবেন।>> ফলের পাশাপাশি জামের মধু, ভিনেগার খেতে পারেন।>> এ ছাড়াও জামের পাতা এবং ছাল শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেলেও উপকার মিলবে।
সূত্র: ইন্ডিয়াডটকম/এনডিটিভি
জেএমএস/এমএস