ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল স্রোতে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বনবিভাগের কয়েকটি জলযান, ওয়াচ টাওয়ার, গোলঘর, রাস্তা, ফুট রেইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত চারটি হরিণ।
Advertisement
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইয়াসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী ও খালগুলোর পানি বাড়তে থাকে। বুধবার প্রায় ৫-৬ ফুট পর্যন্ত পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। পানির তোড়ে পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার), দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্তত ১০টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে প্রবল বাতাসে। সুন্দরবনের মধ্যে সুপেয় পানির সংস্থান হিসেবে পরিচিত ৯টি পুকুরে প্রবেশ করেছে নোনা পানি।
সুন্দরবন থেকে এবং পার্শ্ববর্তী লোকালয় থেকে দুটি করে হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুটি কুমিরের শেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হিসেবে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র করমজলের কোনো প্রাণীর ক্ষতি হয়নি।
Advertisement
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসে কুমিরের দুটি শেড নষ্ট হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বন্য প্রাণীগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়েছি। এ যাত্রায় আমাদের কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি।
সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রাজেশ্বরে একটি, উত্তর তাফালবাড়িতে একটি এবং সুন্দরবনের দুবলা ও কচিখালী এলাকায় একটি করে হরিণের মরদেহ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আর কোনো বন্যপ্রাণী মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে প্রবল পানির তোড়ে আমাদের বেশকিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার) দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। দুটি অফিসের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এটা প্রাথমিক ধারণা, পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এখনও সব জায়গাতে যেতে পারেনি আমাদের কর্মীরা।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে এবারের ঝড়ে তেমন কোনো গাছপালা ভেঙে যাওয়ার খবর পাইনি। তবে চারটি হরিণ মারা গেছে। একটি জীবিত হরিণ উদ্ধার করে বনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে নিয়েছি। এর বাইরে হয়ত আরও কিছু বন্যপ্রাণী বা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।
Advertisement
এছাড়া ইয়াসের প্রভাবে প্রাণহানির শঙ্কায় সোমবার (২৪ মে) সরিয়ে নেয়া পূর্ব সুন্দরবনের আটটি টহল ফাঁড়ির কর্মীদের পুনরায় সেখানো পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন।
মো. এরশাদ হোসেন রনি/এসএস/জিকেএস