জুমআর সপ্তাহের সেরা দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ দিনটি অনেক ঘটনাবহুল। ভবিষ্যতেও এ দিনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। আবার এ দিনে রয়েছে দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত। এসব ঘটনা ও ফজিলত মানুষের রটানো কোনো বিষয় নয়, বরং তা মানুষের জানার উদ্দেশ্যে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা। জুমআর দিনের সেসব ঘটনা ও ফজিলত কী?
Advertisement
>> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য উদয় হওয়ার দিনগুলোতে জুমআর দিনই হচ্ছে সর্বোত্তম। (অতিতে) এ দিনে
১. হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
২. এদিনই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল।
Advertisement
৩. এদিনই তাঁর তাওবাহ কবুল হয়েছিল।
৪. এদিনই তিনি ইন্তিকাল করেছিলেন এবং
৫. (ভবিষ্যতে) এদিনই কেয়ামাত সংঘটিত হবে। (সে কারণেই) জিন ও মানুষ ছাড়া প্রতিটি প্রাণীই শুক্রবার (জুমআর) দিন ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কেয়ামাতের ভয়ে ভীত থাকে।
৬. (ফজিলত) এদিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, নামাজরত অবস্থায় কোনো মুসলিম বান্দা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কোনো অভাব পূরণের জন্য দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাকে তা দান করেন।
Advertisement
হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এসময়টি প্রতি একবছরে একটি জুমআর দিনে থাকে। আমি (আবু হুরায়রা) বললাম, না, বরং প্রতি জুমআর দিনে থাকে। অতঃপর কাব (এর প্রমাণে) তাওরাত পাঠ করে বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (প্রতিদিনের কথা) সত্যই বলেছেন।
(বিশেষ ফজিলতের প্রমাণ)-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করি। সেখানে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি দোয়া কবুলের বিশেষ সময়টি সম্পর্কে জানি। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে তা অবহিত করুন। তিনি বলেন-
‘সেটি হল জুমআর দিনের সর্বশেষ সময়। আমি (আব হুরায়রা) বললাম, জুমআর দিনের সর্বশেষ সময় কেমন করে হবে? অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম বান্দা নামাজরত অবস্থায় ওই সময়টি পাবে...।’ কিন্তু আপনার বর্ণনাকৃত (দিনের সর্বশেষ) সময়ে তো নামাজ আদায় করা যায় না।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেননি, যে ব্যাক্তি নামাজের জন্য বসে অপেক্ষা করবে, সে নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত নামাজরত বলে বিবেচিত হবে।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তা এরূপই।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, বুখারি, মুসলিম)
>> অন্য হাদিসে হজরত আওস ইবনু আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হল জুমআর দিন। এদিন-
১, আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
২. এদিনই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল।
৩. এদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং
৪. এদিনই বিকট শব্দ করা হবে।
কাজেই এদিনের (আমল)
৫. তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।
আওস ইবনু আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, লোকেরা বুঝতে চাচ্ছিল আপনার শরীর তো জরাজীর্ণ হয়ে মিশে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ মাটির জন্য নবি-রাসুলগণের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
আমল
সুতরাং জুমআর দিন সর্বশেষ সময় অর্থাৎ আসরের নামাজ পড়ে মসজিদে অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলিল, তাওবাহ-ইসতেগফার, দোয়া-দরূদ পড়া। মাগরিবের নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। সূর্য ডোবার মুহূর্তে মহান আল্লাহর কাছে নিজের সব চাওয়াগুলো পেশ করা। সে সময় মহান আল্লাহ বান্দার কোনো চাওয়াই অপূর্ণ রাখেন না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিনের দোয়া কবুলের এ বিশেষ মুহূর্তটি কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। এ দিনের ফজিলত ও কল্যাণ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার এবং তা সাওয়াবের নিয়তে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস