জাতীয়

সঠিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে

সঠিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে

কোভিড-১৯ এবং বন্যা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের মাধ্যমে বেশ কিছু ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এই ত্রাণ সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে জাতীয় পর্যায়ে বিভাজিত তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে। যদিও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : কতটা কার্যকর ছিল?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রমের পরিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্থানিক বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিমাণ ও ধরণ অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে। উচ্চ বেকারত্ব, কম বেতনে নতুন চাকরিতে যোগ দেয়া এবং কোভিডের কারণে সৃষ্ট ‘নতুন দরিদ্র’ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি হটলাইন সেবা সম্পর্কিত জনসচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিষেবা সরবরাহকারীদের নির্দিষ্ট ত্রাণ কর্মসূচি এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের মানদণ্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্পষ্ট নির্দেশিকা দিতে হবে। স্বল্প-আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে ত্রাণ সহায়তা পরিবহনের ব্যয়ের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে, যাতে এই বাড়তি ব্যয় তাদের ওপর বোঝা সৃষ্টি না করে। সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব এড়াতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকতে হবে।

Advertisement

এ সময় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ-বিষয়ক অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা দুর্বল উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান সমাজের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ এবং পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের সুপারিশ করেন।

সংলাপে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বিতরণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী করার কথা বলেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন, যেন সঠিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী অতিথি হিসেবে সংলাপে অংশ নেন। তিনি জেলা পর্যায়ের দরিদ্রতার ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণের কথা বলেন এবং জনপ্রতিনিধিদের এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেন।

Advertisement

সংলাপে বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এক্সেস টু ইনফরমেশনের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী এবং নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ. মিশুক। আনির চৌধুরী সাধারণ মানুষকে ত্রাণ কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত করতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করার কথা বলেন। অপরদিকে তানভীর এ. মিশুক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগদ সহয়তা বিতরণের কারণে ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং স্বচ্ছ হয়েছে।

সিপিডির ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি এবং ব্যক্তি সহায়তা প্রদানে উৎসাহ কম রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ত্রাণ সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তথ্য প্রচার ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

এমএএস/এআরএ/জিকেএস