বিনোদন

যৌথ প্রযোজনায় আরো আন্তরিকতা প্রয়োজন

লাক্স সুন্দরী হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেন বিদ্যা সিনহা সাহা মিম। এখন পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নায়িকা। দেশের পাশাপাশি অভিনয় আর গ্ল্যামারে নজর কেড়েছেন টালিগঞ্জের নির্মাতাদের। যৌথ প্রযোজনার ‘ব্ল্যাক’ ছবিটির পর টালিগঞ্জের বেশ কয়টি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বলিউডের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে আলোচনায় এসেছেন। তবে ছবিতে আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয়ের শর্ত দেয়া হলে সেটি ফিরিয়ে দেন তিনি। আগামীকাল শুক্রবার সারাদেশে প্রায় ৮০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে মিম অভিনীত যৌথ প্রযোজনার প্রথম ছবি ‌‌‘ব্ল্যাক’। এটি প্রযোজনা করছেন কলকাতার দাগ ক্রিয়েটিভ এবং বাংলাদেশের কিবরিয়া ফিল্মস। পরিচালনায় আছেন রাজা চন্দ ও ঢাকার কিবরিয়া লিপু। ছবিটির সম্ভাবনা ও নিজের টুকটাক গল্প শোনাতে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে মিম-জাগো নিউজ : কাল আপনার অভিনীত প্রথম যৌথ প্রযোজনার ছবি ব্ল্যাক মুক্তি পাচ্ছে। অনুভূতি কেমন?মিম : এ অনুভূতি আমি গুছিয়ে বলতে পারব না। এককথায় বলবো অসাধারণ। বিগ বাজেটের ছবি। প্রথমবারের মতো দুই দেশের পর্দায় হাজির হচ্ছি। দুটি দেশের দর্শকরা এটি দেখবেন এবং আমাকে মূল্যায়ণ করবেন- ভাবতেই নার্ভাস লাগে। তবে এ মুহূর্তে সাহস পাচ্ছি কলকাতায় ছবিটির ভালো ব্যবসা হচ্ছে জেনে। আমার বিশ্বাস নিজ দেশের দর্শকদের কাছে আমার ছবিটি আরো বেশি সাড়া পাবে।জাগো নিউজ : ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?মিম : ছবিতে আমার নাম তিনা। সোহম অভিনয় করছে বুলেট চরিত্রে। ছবির শুরুতে দেখা যাবে, তিনা ও বুলেট প্রতিবেশী। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই একদিন রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। জাগো নিউজ : তবে ছবিটি কি প্রেমের?মিম : হ্যাঁ। রোমান্টিক একটি গল্প আছে এখোনে। তবে পুরোপুরি প্রেমের ছবিও বলা যায় না। এখানে অ্যাকশন আছে। পরিবারের টানাপোড়েন আছে। গল্পে দেখা যাবে কৈশোরের গণ্ডি পার হতেই বুলেট নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। তখন তিনা তাকে বাঁধা দিতে যায়। তিনা বুলেটকে নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকে, তার কখন কি হয়ে যায়! গল্পে নানা টুইস্ট আছে। প্রেম-ভালোবাসা আর নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের গল্পে দারুণ একটি চলচ্চিত্রই বলা চলে ব্ল্যাক। সবচেয়ে বড় কথা ছবিটাতে কাহিনির মৌলকত্ব আছে। এটা বিগ বাজেটের নির্মাণে পরিচ্ছন্ন একটি ছবি। দর্শকদের ভালো লাগবে।জাগো নিউজ : বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ব্ল্যাকে কাজ করার জন্য নাকি প্রথমে ভারতীয় প্রযোজকদের সঙ্গেই আপনার কথা হয়েছিলো?মিম : কথা সত্যি। আমার কাজ দেখে ভারতীয় প্রযোজক সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিচালক রাজা চন্দও আমার কাজ পছন্দ করেছিলেন ভীষণভাবে। আমাকে তিনি কলকাতায় নিমন্ত্রণ করলেন, আমরা সেখানে ছবির ব্যাপারে আলোচনা করলাম। তখন তারা ভাবলেন, ছবি যেহেতু করবেন, তারা যৌথ প্রযোজনাতেই করবেন। ঠিক সেই সময়ই লিপু ভাই ( ছবির বাংলাদেশি প্রযোজক গোলাম কিবরিয়া লিপু) তাদের সঙ্গে ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। এভাবেই আমরা একসঙ্গে কাজ শুরু করেছিলাম।জাগো নিউজ : কিন্তু ছবির কাজ শুরু করা পর থেকে মুক্তি পাওয়া অবধি ব্ল্যাক ছবিটি নিয়ে দুই দেশেই অনেক জল ঘোলা হয়েছে। সর্বশেষ চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে ওপারের প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন এপারের প্রযোজক। এই বিষয়গুলো ছবির সাফল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?মিম : না। যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো ছবির অভ্যন্তরীন বিষয়। এতে ছবির ব্যবসাতে কোনো প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। কেননা, দর্শক ভালো ছবি দেখতে আসেন। তারা সমালোচনা বা প্রশংসাতে গা ভাসিয়ে ছবি দেখেন না। যদি তাই হতো তবে অনেক ছবিই তো গণমাধ্যমে দারুণ কভার পায়। কিন্তু সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায় কেউ নেই। তাই ব্ল্যাক নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে এটাকে স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই আমি মনে করি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ভালো কিছু হতে গেলে আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনাটাও থাকে। শতভাগ নিখুঁত কিছুই সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রবাদেও আছে ‌‘চাঁদেরও কলঙ্ক হয়’। তবে মুক্তির পর সব সমালোচনার জবাব দিয়ে ‘ব্ল্যাক’ ব্যবসা সফল হবে, বছরের সেরা ছবিগুলোর একটি হবে সেই প্রত্যাশাই করি।জাগো নিউজ : আমরাও ব্ল্যাকের সাফল্য প্রত্যাশা করি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যৌথ ‘ব্ল্যাক’ শতভাগ একটি ভারতীয় ছবি হিসেবে ঢাকায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ভারতের ছবি এদেশে মুক্তি পাওয়ার অনুমতি নেই। তাই একটি কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে যৌথ প্রযোজনার আড়ালে। এর ট্রেলার দেখেও সমালোচকরা বলাবলি করছেন, এটি পুরোপুরি ভারতীয় ছবি। একজন বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে এ নিয়ে আপনি কী বলবেন?মিম : ‘ব্ল্যাক’র টিজার, গান ও ট্রেলার নিয়ে ভালো বলতে পারবেন প্রযোজক বা পরিচালকরা। তারাই আসলে ভালো জানেন, ছবির প্রচারে তারা কী কী বিষয় উপস্থাপন করবেন বা করেছেন। কিন্তু আমি বলবো, মূল ছবিটি দুই দেশেরই। দুই দেশের সংস্কৃতিকেই তুলে ধরা হয়েছে এখানে। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। তবে এ বিষয়ে আমাদের আরো ভাবা উচিত। আরো আন্তরিকতা, নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি প্রয়োজন। যৌথ প্রযোজনার মানেই দুই দেশের সমঝোতার একটি বিষয়। সেখানে কেন একটি দেশ বা ইন্ডাস্ট্রি অবহেলিত হবে? যারা এমনটি করেন তাদের সাথে ছবি নির্মাণের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমি প্রথমে একজন বাংলাদেশি। নিজ দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ আমি করতে চাই না। তবে যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে একটি বিষয় দেখেছি- শিল্পীদের আসলে এ বিষয়ে কিছু করার থাকে না। মূল দায়িত্বটা তো পালন করেন প্রযোজক বা পরিচালক। দেখুন, ববিতা-শাবানা-রোজিনারা যখন যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করেছেন, তখন কিন্তু মনে হয়নি যে ছবিগুলো ভারতীয় ছবি। এখন পার্থক্যগুলো সত্যি চোখে লাগে। তাই আমি আবারো বলবো পরিচালক-প্রযোজকদের আরো ভাবা উচিত যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে।জাগো নিউজ : সোহমের সাথে কাজের অভিজ্ঞা কেমন ছিল?মিম : খুব ভালো। সোহম মানুষ হিসেবে খুব ভালো। আর অভিনেতা হিসেবেও। ভীষণ হেল্পফুল। সে অনেক ছোটকাল থেকে বড়পর্দায় অভিনয় করে আসছে। সেজন্য অভিনয়ে সে দারুণ দক্ষ। চরিত্রটি রপ্ত করে সেটাতে সে সহজেই ঢুকে যেতে পারে। ওকে কাজের ব্যাপারে খুব অ্যার্জিটিক এবং সিনসিয়ার মনে হয়েছে। এককথায় বলবো সোহমের সাথে কাজের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছিও আমি।জাগো নিউজ : ব্ল্যাকের প্রচারের জন্য সোহমের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু আসেননি কেন?মিম : হ্যাঁ ছবির প্রচারণার জন্য সোহমের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু আমি জেনেছি জরুরি কাজে আটকে পড়ায় সে আসতে পারেননি। এও শুনছি আগামী মঙ্গলবার সে ঢাকায় আসতে পারে, তবে সিউর না। এ বিষয়ে লিপু ভাই ভালো বলতে পারবেন।জাগো নিউজ : আপনার অভিনীত ‘গুডমর্নিং লন্ডন’ ও ‘সুইটহার্ট’ ছবি দু’টির কী খবর?মিম : গুডমর্নিং লন্ডনের কাজ প্রায় শেষ। ছবিটিতে আমি লন্ডনে পড়াশোনা করা এক বাঙালি মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। মেয়েটির এক রহস্যময় অতীত থাকে। সে একদিন তার বাবার কাছে ফিরে আসে। তার এক ছেলে বন্ধু থাকে। সম্পর্কের নানা টানাপড়েনের মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকে চরিত্রটির গল্প। সবটুকু এখনই বলতে চাই না। আর বাপ্পীর বিপরীতে সুইটহার্ট ভীষণ রোমান্টিক একটি ছবি। অনেকদিন পর রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করলাম। এর আগে হুমায়ূন স্যারের ‘রহস্য’ নামে একটি নাটকে কাজ করেছিলাম তার সঙ্গে। নাটকের শুটিংয়ের সময় কিন্তু সেভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। এবার কিন্তু বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছি। খুব মজা করে কাজ করেছি। শুনছি ছবিটি আসছে ভালোবাসা দিবসে মুক্তি দেয় হবে।জাগো নিউজ : নতুন করে কোনো ছবিতে কাজ করছেন?মিম : আমি ছোট পর্দায় কাজ কমিয়ে দিয়েছি। নিজেকে একজন চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তাই আগামী বছর থেকে পুরোপুরিই ব্যস্ত থাকবো চলচ্চিত্র নিয়ে। এরইমধ্যে বেশ কিছু ভালো চরিত্রে কাজের সুযোগ পাবো। বিশেষ করে কলকাতার বেশ কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে নতুন বছরে বেশ কিছু বিগ বাজেটের ছবিতে জনপ্রিয় নায়কদের বিপরীতে আমাকে দেখতে পাবেন দর্শকরা। পাশাপাশি লিপু ভাইয়ের নতুন একটি ছবিতে কাজ করার কথা রয়েছে।জাগো নিউজ : বলিউডের ছবি ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে আপনার নানা খবর শুনছি। বিষয়টি কী বলুন তো?মিম : বিষয় যেটা শুনেছেন সেটাই। বলিউডের স্বনামধন্য একটি প্রযোজনা হাউজ থেকে আমাকে কাজের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। প্রথমে রাজি হলেও পরে আপত্তিকর দৃশ্যের শর্তে আমি তাদের না করে দিয়েছি। আমার দেশ-জাতি যেটা কোনোদিন গ্রহণ করবে না সেটা আমি করতে পারি না। আমার যোগ্যতা বা মেধা থাকলে সুযোগ বারবার আসবে। আমাদের শাবনূর-মৌসুমী, বলিউডে কাজল-মাধুরীরাও তো বড় অভিনেত্রী। এত দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাদের তো আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয় করার প্রয়োজন পড়েনি!এনই/এলএ

Advertisement