বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাব পড়েনি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। প্রায় স্বাভাবিকভাবেই চলেছে বন্দরের কার্যক্রম। দুপুর ১২টার দিকে বন্দরের কন্টেইনার ইয়ার্ডে হালকা পানি জমলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তা নেমে যায়। পানির কারণে কন্টেইনারের মালামালে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
বুধবার (২৬ মে) বেলা ৩টার দিকে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান বন্দর সচিব ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেয়েই আমরা কয়েকদিন আগে থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। আজ দুপুরে পূর্ণিমার জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কনটেইনার ইয়ার্ডে হালকা পানি জমেছিল। তবে সেটি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নেমে যায়। সর্বোপরি যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ শেষে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্র সঙ্কেত তিন এর মধ্যে হলে আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। চার এর ওপর হলে আমরা কনটেইনার স্থানান্তর প্রক্রিয়াসহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় অন্যান্য কর্মসূচি নিয়ে থাকি।
Advertisement
ঘূর্ণিঝড়েই ইয়াসের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এবং উপজেলার মধ্যে বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ও আনোয়ারার কিছু কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে এখনও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, আমার উপজেলায় এখনও কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র সারিকাইত ইউনিয়নে কিছুটা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাৎ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে এখন হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও খুব সামান্য বেগে বাতাস বইছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূল অতিক্রম করছে। চট্টগ্রামে এর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। আবার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনাও কম। খুলনা অঞ্চলের দিকে কিছুটা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে, দুপুরে ইয়াস সম্পর্কিত ১৮ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
Advertisement
বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোয় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বলেও বিশেষ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিজানুর রহমান/এসএস/এএসএম