মতামত

ছিনতাইকারীর লাগাম টানুন

ইমরান হুসাইন

Advertisement

করোনার এই ভয়াবহ অবস্থার কারণে সমাজের মানুষ যখন আতঙ্কিত এবং বেশ হতাশাজনকভাবে সময় কাটাচ্ছে তার মধ্যেও মাথাচাড়া দিয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করছে সামাজিক ব্যাধিগুলালো।ক্রমেই বেড়ে চলেছে সমাজের এরুপ ভয়াবহ অবস্থা,এগুলোর মধ্যে অন্যতম খুন,ধোকাবাজি, চাঁদাবাজি,মলমপার্টি,গামছাপার্টি, ছিনতাই,ইত্যাদি।

মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো প্রভাব ফেলছে এই সমস্যাগুলো। যা এই সময়ে সমাজ ও দেশের ওপর চরম বিরূপ অবস্থা সৃষ্টি করছে। সমাজের এই ব্যাধি আমাদের কাছে অতি পরিচিত হলেও বর্তমান সময়ে তা খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক বিষয়। বর্তমান দিনে টেলিভিশনের পর্দা বা খবরের কাগজ খুললেই আমরা এমন নৃশংস ঘটনা গুলো দেখতে পায়।তবে এসময়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মলমপার্টি,গামছাপার্টির দৌরত্ব বাড়ায় আতংকিত সাধারণ মানুষগণ। শুধু ছিনতায়েই সীমাবদ্ধ নয় কখনও কখনও তাদের কবলে পড়ে প্রানের নাশও হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে রাজধানীর গামছাপার্টির এক বিশাল চক্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল এলাকায় এই চক্রের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে দুইজন। ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরো দুইজনকে। কোনোভাবেই থামছে না গামছা পার্টির দৌরাত্ম্য। গেলো এক বছরে এই চক্রের হাতে শুধু রাজধানীতেই খুন হয়েছেন অন্তত দেড় ডজন। সিএনজি চালক ও যাত্রী সেজে রাতের বেলায় মানুষকে জিম্মি করে গামছা পার্টির দুর্বৃত্তরা। পরে সর্বস্ব লুটে নিয়ে হত্যার পর নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায় মরদেহ। গত ৬ মে ভোর রাতে কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর থেকে সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর নামের এক যুবকের গলায় গামছা পেঁচানো রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে করোনা পরীক্ষা করাতে ওই রাতে ঢাকা এসেছিলেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর কুড়িল এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে গামছা পার্টির বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আর ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় দুইজনকে। আটককৃতরা জানায়, ৬ মে রাতে তারাই হত্যা করেছে সুভাষকে।এরা কৌশলে প্রথমে কাউকে সিএনজিতে তুলে নেয়। এরপর কোনো একটি নির্জন স্থানে যাওয়ার পর তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে নাকে-মুখে আঘাত করে সব ছিনিয়ে নেয়। পরে সে অবস্থাতেই লাশ ফেলে দেওয়া হয়।আর এর জন্য রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোই এই চক্রের প্রথম পছন্দ , গেলো এক বছরে প্রায় দেড় ডজন মানুষ এই পার্টির হাতে নির্মমভাবে জীবন দিয়েছেন।

এর আগে রাজধানীর টানাপার্টির ছিনতাই বেড়েছিলো। এবং ছিনতাইকারীর হেঁচকা টানে রিকশা থেকে পড়ে সুনিতা রানি দাস (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছিলো। এ নিয়ে গত পাঁচ বছরে দুইজন নারী ও তিনজন শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে শুধু ছিনতাইকারীর এই হেচকাটানে। আহত হয়েছেন আরো সাত নারী ও শিশু। দিনের পর দিন এ ঘটনা যেনো বেড়েই চলেছে।দেশে এ ব্যাপারে কঠোর আইন থাকলেও তার প্রয়োগহীনতায় এঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। মূল সমস্যাটা হলো এসব ঘটনায় পুলিশ কয়েক দিন তৎপর থাকলেও পরে ঝিমিয়ে পড়েন। আর মূল আসামিরা রয়ে যায় আইনের ধরাছোয়ার বাইরে। ফলে এ ধরনের ছিনতাই ও ছিনতাইয়ের পরে মৃত্যুর ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে।

করোনার এই কঠিন সময়ে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে চুরি ডাকাতি ছিনতাই মলমপার্টি অজ্ঞানপার্টিদের দৌরাত্ব বেড়ে চলেছে কয়েকগুন।নগর মহানগর গুলোতে আরো বেশি ঘটে।পুলিশের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাই মামলা হয়েছে ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯টি। আর ২০২০ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬টি। তবে ভুক্তভোগীদের মতে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ঢাকার সিএমএম আদালতের জিআর খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই হয় অপেক্ষাকৃত বেশি।

একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়,চলতি বছরে রাজধানীতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অজ্ঞান ও মলম পার্টি সদস্যদের বিরুদ্ধে ৩৮৬টি মামলা রয়েছে । এর মধ্য ৩৬৮ জনকে ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। মোট ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ১৫ সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় ছিনতাইকারীরা বা অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে থাকে এদের কেউ কেউ ডাব বিক্রেতা, কেউ পানির ফেরিওয়ালা, কেউ হচ্ছে সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী, আবার অজ্ঞান করা কিংবা চোখে মলম লাগানোর ক্ষেত্রে স্বল্প পাল্লার মাইক্রোবাসকে ব্যবহার করে থাকে তারা।ছিনতাইকারীদের এমন কুচক্র থেকে রেহায় পেতে আমাদের একটু বেশিই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। পথ চলতে অধিক সচেতন না হলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শুধু নিজে সচেতন না আমাদের আশেপাশের প্রিয় পরিজনকে সকলকেই সচেতন করতে হবে।সেই সাথে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Advertisement

আমাদের সমাজ থেকে চুরি ছিনতাইয়ের মতো এমন সামাজিক ব্যাধি এমন নিকৃষ্ট কাজের চিহ্নগুলো মুছে দিতে হলে প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নৈতিক শিক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা। সবাই সচেতন হলেই এরুপ কর্মকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অপরাধী যাতে কঠোর শাস্তি পায় সেদিকটাও কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এমন চুরি ছিনতাইয়ের কবল থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারবো।

লেখক : শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।imranhossain64.bd@gmail.com

এইচআর/জেআইএম