মতামত

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অর্জন

বিশ্বের একশ’ বিশিষ্ট দৃঢ়চিন্তার ব্যক্তিত্বের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘ফরেন পলিসি’ বুধবার এই তালিকা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের বিষয়। ম্যাগাজিনটি বিশ্ব নীতি, অর্থনীতি এবং ধারণা নিয়ে কাজ করে। তালিকায় জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও রয়েছেন। এসব বিশ্ব নেতৃত্বের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম এক সাথে উচ্চারণ অত্যন্ত গৌরবের।  তালিকা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়চেতা ১৩ ব্যক্তির মধ্যে একজন। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই তালিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ‘ফরেন পলিসি’ এই তালিকা করে আসছে। তালিকায় বিশ্ব নেতৃত্ব, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, শিল্প, সরকারি চাকুরীজীবীরাও স্থান পেয়েছেন।এই তালিকায় স্থান পাওয়া যে কতোটা সম্মানজনক তা বোঝা যায় এর আগে যাদের নাম এসেছে সেটি দেখলেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, মিয়ানমারের নেতা নোবেল জয়ী অং সান সূ চি ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রয়েছেন এই তালিকায়। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা `চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ` পুরস্কার পান। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘ পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক এখিম স্টেইনারের হাত থেকে `চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ` পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার একই বিষয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ফরেন পলিসিতে’ তাঁর নাম আসায় পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা ও দায়িত্ব বোধের জায়গা আরো বেড়ে গেল।  বাংলাদেশ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের দেশ হিসেবে বিশ্বে আমাদের পরিচিতি। কিন্তু  প্রকৃতির এই প্রতিকূলতার মুখে বাংলাদেশের মানুষ শুধু টিকে থাকতেই জানে না, বরং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলো দক্ষভাবে মোকাবেলা করার সুদূরপ্রসারী কর্মকৌশলও নিতে পারে।  বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৪০ লাখ বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ চালু করে বিশ্বে প্রথম `সোলার জাতি` হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হওয়ার পরও বাংলাদেশের কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে, নিশ্চিত হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা । বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিল দিয়ে `ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড` গঠন করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এ তহবিলে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমাদের সামনে রয়েছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ। গবেষকরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা হবে এবং তারা শহরাঞ্চলের দিকে ধাবিত হবে। এছাড়া কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। দখল-দূষণে নদীগুলোও মরে যাচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বনভূমি। কলকারখানা, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এসব বন্ধ করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই অর্থবহ হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সব অর্জন। এইচআর/এমএস

Advertisement