দেশজুড়ে

বগুড়ায় দূরপাল্লার বাসে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

করোনা সংক্রমণ রুখতে চলমান লকডাউনের মধ্যে বগুড়ায় চালু হওয়া দূরপাল্লার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সেইসঙ্গে সরকার ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দেয়া নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। তাই ভাড়া বাড়ানোর পরও বাসগুলোর সব আসনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার আছে শুধু কাগজ-কলমে।

Advertisement

সোমবার (২৪ মে) বগুড়ার শেরপুর শহরের খেজুরতলাস্থ নতুন বাস টার্মিনাল ও ধুনটমোড় এলাকায় গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।

কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দূরপাল্লার বাস চালু হওয়ায় টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পরিবহন সংকট না থাকায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা গেলেও প্রাণঘাতী করোনা নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই তাদের। এমনকি এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আগ্রহ নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাগামী নামিদামী একটি পরিবহনের বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসের কোনো আসন ফাঁকা নেই। সব আসনেই নারী-পুরুষ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে বাসগুলো। এ ছাড়া বেশিরভাগ যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা থাকলেও তাদের কোনো জোরালো ভূমিকা নেই। রহস্যজনক কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তারা।

Advertisement

অভিযোগ রয়েছে, সকালের দিকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য কিছু বাস আটকে রাখা হলেও পরবর্তীতে সেসব ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে সেই আগের মতোই অনেকটা নির্বিঘ্নে সব গণপরিবহণ চলছে। এমনকি অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

সোলায়মান আলী, সুলতান মাহমুদসহ একাধিক যাত্রী বলেন, ‘সাধারণত ঢাকায় যেতে বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির বাসে তাদের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগতো। কিন্তু এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘বাসে ওঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া বা মাস্ক পরার ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি তাদের। তা ছাড়া চালক-হেলপারের মুখেইতো মাস্ক নেই। এ ছাড়া বাসে অর্ধেক যাত্রী অর্থাৎ দুই সিটে একজন করে যাত্রী থাকার কথা। কিন্তু প্রত্যেক সিটেই যাত্রী নেয়া হয়েছে।’

বাসচালক শামছুল হক জানান, অতিরিক্ত যাত্রী তোলার জন্য মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ তার গাড়ি আটক করেছিল। তবে শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে তদবির করে সামান্য চা-নাস্তার খরচ দিয়ে ছাড়িয়ে নেন বলে বলে জানান তিনি।

Advertisement

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হাইওয়ে পুলিশের শেরপুর গাড়ীদহ ক্যাম্পের ইনচার্জ বানিউল আনাম বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ নেই। তাই বাসগুলোতে তল্লাশি করা হচ্ছে। অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী থাকলেই আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গণসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কোনো বাস থেকে টাকা নেয়ার কোনো অভিযোগ পাননি বলেও জানান তিনি।

বগুড়া জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দেয়া চারদফা নির্দেশনা মেনে বাসে যাত্রী পরিবহনের জন্য চালক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গাড়ি ছাড়ার শুরু ও শেষে জীবাণুমুক্ত করা, পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন না করা-এসব নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ইএ/জিকেএস