বিশেষ প্রতিবেদন

একজন মুক্তিযোদ্ধার সফলতার কাহিনী

বয়স তখন ১৫-১৬ বছর। টগবগে যুবক, সুঠাম দেহের অধিকারী। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। অনেক সপ্ন, অনেক আশা। বড় হবে, চাকরি করবে। কিন্তু দেশ তো স্বাধীন না। উর্দু ভাষায় কথা বলা, অন্য দেশের কথা মতো চলা। না, মানি না এসব। সবাই দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধে যাচ্ছে। আমিও যাবো যুদ্ধে, দেশকে স্বাধীন করবো। এ প্রত্যয় নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন সুবোধ চন্দ্র রায়।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া থানার মধুপুর গ্রামে জন্ম সুবোধ চন্দ্র রায়ের। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সুবোধ দ্বিতীয়। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা চলাকালীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টর রংপুর-দিনাজপুরের সেক্টর কমান্ডর খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে পঞ্চগড় জেলার ভজনপুরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এই সেক্টরের সরাসরি পরিধি ছিল প্রথমে পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুরের বালুরঘাট ও পুর্ব দিকে আসামের মানিকের চর পর্যন্ত। যুদ্ধে অনেক বীভিষিকাময় স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার।মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ চন্দ্র বলেন, পঞ্চগড় জেলার ভজনপুর এলাকায় আমরা যুদ্ধ করি। আমাদের সঙ্গে সবসময় একটি বন্দুক, একটি বেলচা (মাটি কাটার যন্ত্র), থালা, গ্লাস থাকতো। আমরা যখন রাতে ঘুমাতে যেতাম তখন একটি গর্ত করে তার মধ্যে দুই, তিনজন একসঙ্গে ঘুমাতাম। একদিন রাতে আমার এক বন্ধু গর্ত করতে থাকলে আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। এসময় একটি মাইন বিস্ফোরণ হয়ে আমার বন্ধুটি সেখানে মারা যায়। আমিও গুরুতর আহত হই। সেই দিনটি আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। এমন আরও অনেক স্মৃতি আছে যুদ্ধের।বর্তমানে সুবোধ চন্দ্র রায় একজন সফল বাবা। যুদ্ধ শেষে আবার নিজ গ্রামে ফিরে এসে পড়ালেখা শুরু করেন তিনি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সুগারমিলে জুনিয়র অফিসার হিসেবে ১৯৭৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৮২ সালে চায়না রানীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সুবোধ চন্দ্র রায়। এখন তিনি দুই পুত্র সন্তানের বাবা। বড় ছেলে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে চুয়েট ও ঢাবি ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় উতীর্ণ হয়েছে। ছোট ছেলে পিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে রুহিয়া কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে। তার দুই সন্তান ভালোভাবে পড়ালেখা করছে।সুবোধ চন্দ্র রায় আরও জানান, বর্তমান সরকার আমাদের মুক্তিযোদ্ধার জন্য অনেক কাজ করছে। সরকার আমাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও রেশন না দিলে হয়তো আমরা যুদ্ধের পরে নিজেদেরকে এভাবে গড়ে তুলতে পারতাম না। আমাদের সংসার, সন্তানদের মানুষ করার জন্য সরকারের সহযোগিতা না পেলে আমরা পথে বসে যেতাম। তাই সরকারের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।রবিউল এহসান রিপন/বিএ    

Advertisement