প্রবাস

বাহরাইনে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে

সালেহ্ আহমদ সাকী, বাহরাইন থেকে

Advertisement

বাহরাইনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে এতদিন করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ইদানিংকালে বিশেষ করে ঈদের পর থেকে করোনা রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছে।

আগে যেখানে প্রায় ১ হাজারের নিচে রোগী পাওয়া যেত, কিন্তু ঈদের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন আড়াই হাজারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। ২৩ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে ৩ হাজার ১শত ৭৭ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১১ জন। যা ছোট দেশটির জনসংখ্যার তুলনায় এটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে প্রায় ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭শত ৯৫ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩শত ৮জন।

দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ১৪ দিন পর সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে। সার্টিফিকেট নিশ্চিত হলে মোবাইলে BeAware অ্যাপসে ছবিসহ গ্রিন চিহ্ন আসে এবং এটা দেখে সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা হচ্ছে। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে ভেক্সিনেশনের আওতায় আনার পর সরকার শর্ত সাপেক্ষে রমজানের ঈদের পর থেকে বন্ধ থাকা সবকিছু পর্যায়ক্রমে খুলে দিচ্ছে। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ব্যক্তিরাই খাবার হোটেল, কফি শপ, জিম সেন্টার, পার্টি সেন্টার, সিনেমা হলে প্রবেশ করতে পারবেন।

Advertisement

এছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত রমজানের প্রথম থেকে যাদের করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট আছে তাদেরকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তাই দীর্ঘদিন থেকে স্থবির হয়ে যাওয়া কাজে-কর্মে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছিল।

কিন্তু হঠাৎ করে ইদানিংকালে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২১মে হতে ৩ জুন পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ব্যতীত সরকারি অফিস, সেলুন, শপিং সেন্টারে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এছাড়া আগামী ২৩ মে থেকে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল থেকে আগত যাত্রীদের জন্য ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধুমাত্র যাদের নিজের নামে বা পরিবারের কারো নামে ফ্ল্যাট বা রুমের চুক্তিপত্র আছে তারা সেই চুক্তিপত্র প্রদর্শন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারবেন।

নতুবা ফ্লাইটের পূর্বে ১০ দিনের কনফার্ম হোটেল বুকিং করে আসতে হবে। সরকার অনুমোদিত হোটেলের তালিকা হচ্ছে হলিডে বাহরাইন হোটেল, এক্সিবিশন রোড, মানামা। জেসমিন টাওয়ার, হুরা। ক্রিস্টাল প্যালেস হোটেল, জুফের। মার্কো পোলো হোটেল, হুরা।

Advertisement

মন্ট্রিল হোটেল, হুরা। রয়েল পোনিসিয়া হোটেল, মানামা। BIW এপার্টমেন্ট, হিদ। সোয়ান টাওয়ার, বিল্ডিং নং ১৪৯২, ব্লক ৩২৪। টাঙ্গিয়ার টাওয়ার, বিল্ডিং ১০০২, ব্লক ৩৪০, রোড ৪০২১। মুনটানা টাওয়ার, বিল্ডিং ৬২২, ব্লক ৩২৪, রোড ২৪১১। ড্রিম প্লাজা, বিল্ডিং ১২৩৮, ব্লক ৩৪০, রোড ৪০২৬। আব্দুল্লা প্লাজা, বিল্ডিং ১৯৮২, ব্লক ৩৪০, রোড ৪০২৬।

আগের তুলনায় করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে আলাপকালে ইওয়ান কার্পেন্টারের সুপারভাইজার আব্দুস সামাদ জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আগের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ কাজ-কর্ম বেড়েছে। যদিও আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজকর্ম করে থাকি। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়ের মধ্য থেকেই কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। বাহরাইন প্রবাসী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ নেয়ার পর ২য় ডোজের অপেক্ষায় আছি। সার্টিফিকেট না থাকার কারণে মসজিদে প্রবেশ করতে পারছেন না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম বাহরাইন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বশির আহমদ বাহরাইনে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাহরাইনে করোনার ইন্ডিয়ান ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তাই সবাইকে যথা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, বাহিরে সার্বক্ষণিক মাক্স ব্যবহার করতে এবং বাহরাইন সরকার কর্তৃক করোনাকালে আইন কঠোরভাবে মেনে চলতে অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে বাহরাইনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, বাহরাইন সরকার সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে, পরবর্তীতে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাই যারা এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন নাই, তারা দ্রুত ভ্যাক্সিন নেয়ার জন্যে তিনি আহ্বান জানান।

সালেহ্ আহমদ সাকী/এমআরএম