সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) কাগজ সরবরাহ না করায় প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপা থমকে গেছে। কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে অন্যরাও চাহিদামতো কাগজ সরবরাহ করছে না। আর মূদ্রণ শিল্প মালিকরা অধিক লাভের আশায় পাঠ্যপুস্তক ছাপা ফেলে নোট গাইড ছাপছেন। ফলে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের অর্ধেক বই ছাপার কাজ শেষ হয়নি। বাকি দিনের মধ্যে সব বই ছেপে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তরা। তবে তাদের দাবি, যেকোনো মূল্যেই নির্ধারিত সময়ে বই ছাপার কাজ শেষ করবেন। এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিকে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৬৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৪২টি বই, প্রাথমিকের ২ কোটি ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৭টি বই এবং মাধ্যমিকের ১ কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১৮ শিক্ষার্থীর জন্য ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৪ হাজার ৩৭৩টি বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়। সব মিলে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০টি বই ছাপা হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাধ্যমিকের ৯৪ শতাংশ, প্রাথমিকের ৩৯ শতাংশ এবং মাদ্রাসার ৯৪ শতাংশ বই উপজেলা সদর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাকি দিনের মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।সূত্রটি আরো জানায়, এবার ২২টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক বই ছাপার কাজ পেয়েছে। প্রাথমিকের বইয়ের জন্য প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন কাগজ দরকার। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান কেপিএম (কর্ণফুলী পেপার মিল) এখনো ২৬৭ টন কাগজ সরবরাহ করেনি। অথচ ৩০ জুনের মধ্যে কাগজ সরবরাহের কথা ছিল। বারবার চিঠি দিয়েও চাহিদামতো কাগজ পাচ্ছে না এনসিটিবি। বাধ্য হয়ে ১ ডিসেম্বর রাতে এনসিটিবির এক কর্মকর্তাকে মিলে পাঠানো হয়েছে। সূত্রমতে, কাগজ সঙ্কট ছাড়াও প্রেস মালিকরা অধিক লাভে বিনামূল্যের বই ছাপা বন্ধ করে নোট গাইড ছাপছে। যারা নোট-গাইড ছাপেন তারা বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের কাগজের চেয়ে বেশি দামে নগদ মূল্যে কাগজ কেনেন। এ কারণে মিল মালিকরা ব্যবসায়িক লাভের জন্য নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের কাছেই বিক্রিতে আগ্রহ দেখায়। ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করে উপজেলা পর্যায় পৌঁছে দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাকি বই ছাপা দুষ্কর। ছাপা কাজ শেষ হলেও দুর্গম উপজেলায় পৌঁছানো যাবে কি না তা নিয়ে চরম শঙ্কা রয়েছে। ফলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবের দিন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেককেই শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হতে পারে।মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরিনিয়াবাত বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এখন প্রতি টন কাগজের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। দরপত্রের চেয়ে দাম বৃদ্ধির কারণে কাগজ সরবরাহ অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে মিল মালিকরা। যার কারণে বই ছাপার গতি কমে গেছে। কাগজের মূল্যের পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বাড়ায় প্রেসেও খরচ বেড়েছে। এছাড়া বেশি লাভের জন্য মিল মালিকরা আমাদের কাগজ না দিয়ে নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের কাগজ সরবরাহ করছে। ফলে কাগজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, মুদ্রণ শিল্প সমিতির অভিযোগের ভিত্তিতে এনসিটিবি ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো প্রমাণ পায়নি। টেন্ডার নেয়ার সময় তারা নিজেদের প্রেস ও বাঁধাই কারখানা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। যে কারণে তাদের টেন্ডার দেয়া হয়েছে। এখন অভিযোগ করছেন, আমাদের কাজের কারণে তারা কাজ করতে পারছে না। তারপরও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ১৫ দিন এনসিটিবির বই যেসব ছাপাখানায় ছাপা হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি অভিযোগ করেন, দরপত্র অনুযায়ী ৮০ গ্রাম কাগজে প্রাথমিকের বই ছাপার কথা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ৬০ গ্রাম কাগজেও বই ছাপা হচ্ছে না। এই নিম্নমানের কাগজ মিলগুলো সরবরাহ করতে পারছে না বলেই কাগজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) অধ্যাপক মিয়া ইনামুল সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ৬২ দিন পরে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরু হয়। এছাড়া কেপিএমসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সঠিক সময়ে কাজ সরবরাহ না করায় প্রাথমিকের বই ছাপায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। বই মুদ্রণের কার্যাদেশ পাওয়া মুদ্রাকরদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাগজ সরবরাহ করতে কাগজ মিল মালিককে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। এই সময়ে নোট-গাইড না ছাপতে বই ব্যবসায়ীদেরও অনুরোধ করা হয়েছে। সঠিক সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিবো। এনএম/এসএইচএস/এমএস
Advertisement