লোহা-লক্কর খেতে খেতে একসময় আস্ত বিমান পর্যন্ত খেয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও খেয়েছেন কম্পিউটার, টেলিভিশন, বাইসাইকেল, শপিং কার্টসহ নানা ধাতব উপাদান। চিকিৎসকদের মতে, তিনি পিকা রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্তরা খাওয়ার অযোগ্য বস্তুর (মাটি, সাবান, চুল, ধাতু, কাচ, কার্পেট, ইত্যাদি) প্রতি আসক্ত হয়ে থাকেন।
Advertisement
বলছি মিশেল লোটিটোর কথা। তিনি মনসিয়র ম্যানেজআউট নামেও পরিচিত। তার জন্ম হয় ১৯৫০ সালে ফ্রান্সের গ্রেনোবেলে। ৯ বছর বয়স থেকে মিশেল খাওয়ার অযোগ্য বস্তুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। তিনি লোহা-লক্কর থেকে শুরু করে কাচ, ধাতব উপাদান ইত্যাদি খাওয়া শুরু করেন।
ছোটবেলায় মিশেল হঠাৎই একদিন ভাঙা গ্লাসের টুকরো চিবিয়ে খাওয়া শুরু করেন। এরপর একেকটি করে কাচের গ্লাস ভাঙতেন আর টুকরোগুলো চিবিয়ে খেতেন। এসব অস্বাভাবিক পদার্থ খেয়ে আবার হজমও করে ফেলতেন তিনি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, কলা এবং ডিম সেদ্ধসহ নরম খাবার খেলেই বরং অসুস্থ হয়ে পড়তেন মিশেল।
পরবর্তীতে মিশেল তার নেশাকে পেশা হিসেবে গড়ে তোলেন। ১৯৬৬ সালে ১৬ বছর বয়সে প্রকাশ্যে মিশেল ধাতব উপাদান খাওয়া শুরু করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি তার এই বিস্ময়কর প্রতিভা প্রদর্শন করে খ্যাতি অর্জন করেন।
Advertisement
তার অস্বাভাবিক বিভিন্ন খাবার খাওয়া দেখতে ভিড় জমাতেন দর্শনার্থীরা। বাইসাইকেল, টেলিভিশন, শপিং কার্টসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ মুহূর্তেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলতেন তিনি। জানা যায়, ১৯৫৯-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মিশেল প্রায় ৯ টন ধাতব পদার্থ গ্রহণ করেন।
মিশেল জানান, প্রতিবার বেশি পরিমাণে ধাতব পদার্থ খাওয়ার আগে মিনারেল অয়েল বা খনিজ তেল ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতেন তিনি। এরপর ধাতব বস্তুগুলো টুকরো করে সেগুলো চিবিয়ে ও কামড়ে খেতেন।
সবশেষ তিনি আস্ত এক বিমান খেয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়েন। ১৯৭৮-১৯৮০ সাল টানা ২ বছর ধরে তিনি ‘সেসনা ১৫০’ নামক আস্ত বিমানের সমস্ত অংশ খুলে খুলে খেয়ে সাবাড় করেন।
‘স্ট্রেঞ্জ ডায়েট বা অদ্ভূত খাদ্যাভাস’ নামে গিনেস বুকে নাম ওঠে তার। মিশেল তার জীবনে আস্ত একটি বিমানসহ আরও খেয়েছেন- বাইসাইকেল, শপিং ট্রলি, শ্যান্ডেলিয়ার্স, খাট, স্কিস, কম্পিউটার, ট্যাংক এবং কফিন। ২০০৭ সালের জুনে মিশেল ৫৭ বছর বয়সে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেন।
Advertisement
জেএমএস/জেআইএম