দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে এখন চলছে প্রজনন মৌসুম। নদীতে এসেছে প্রচুর মা মাছ। এপ্রিল থেকে জুন মাসের যেকোনো তিথিতে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ডিম ছাড়ে মা মাছ। এরইমধ্যে চলে গেছে তিনটি তিথি। তবে এখনও ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
Advertisement
সোমবার (২৪ মে) থেকে শুরু হচ্ছে পূর্ণিমার জো। তবে জো শুরু এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলেও ঘূর্ণিঝড়ের ইয়াস চলাকালীন সময়ে নদীতে ডিম ছাড়বে না মা মাছ।
জানা গেছে, হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ার শর্ত হচ্ছে- পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এ সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয় তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা গবেষকরা জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরে এরইমধ্যে তিনটি জো চলে গেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মা মাছ ডিম ছাড়েনি। আবার আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে পূর্ণিমার জো। এটি ২৮ মে পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
Advertisement
আর এ সময়ে পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এবার জো-তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টি বা যাবতীয় বিষয় ঠিক থাকলেও শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণেই মা মাছ ডিম ছাড়বে না।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৬ মে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। আর সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ২৮ মে তারিখের মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, তবেই মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় হালদাতে মা মাছ ডিম ছাড়ে না। এটা গবেষণায় প্রমাণিত। পূর্ণিমার জো, বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল সব ঠিকঠাক থাকলেও শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে মা মাছ ডিম ছাড়বে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৬ মে যদি ঘূর্ণিঝড় উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায় এবং এরপর ২৮ তারিখ তথা পূর্ণিমার জো শেষ হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। এবার জোতে ডিম না ছাড়লেও জুন মাসের যেকোনো জো থাকাকালীন সময়ে হালদাতে মা মাছ ডিম ছাড়বে।’
Advertisement
খাগড়াছড়ির জেলার বাটনাতলী পাহাড় হতে নেমে সর্পিল ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হালদা নদী মিলেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এই নদীর সুরক্ষায় সরকার ইতোমধ্যে এটিকে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণা করেছে।
মিজানুর রহমান/এসএস/জেআইএম