বাংলাদেশের যুব সমাজ সংখ্যায় বাড়লেও কণ্ঠস্বর বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। রোববার (২৩ মে) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংলাপে তারা এ মন্তব্য করেন। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা : স্থানীয় প্রেক্ষিত ও যুব সমাজ’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজনে সহযোগিতা করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।
Advertisement
এতে বক্তারা বলেন, টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০-এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অংশগ্রহণমূলক করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যুব সমাজকে এসডিজি বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার গৃহীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসমূহে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। একইসঙ্গে, যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ এবং ২০২০ সালে দুইটি ভলান্ট্রি ন্যাশনাল রিভিউ (ভিএনআর) রিপোর্ট প্রস্তুতকালে যুব সংগঠন ও যুব প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। কিন্তু তাদের মতামত ও পরামর্শসমূহ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল কি-না সে বিষয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
এছাড়া এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গ্রামীণ ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যুবরা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং এটি অনস্বীকার্য যে, জাতীয় এবং বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে যুব সমাজের কার্যকর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা আছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
Advertisement
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। এতে জানানো হয়, সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের গবেষক নাজীবা আলতাফ।
তিনি বলেন, শুধু কর্মভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ না করে, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যুবভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং যুবদের অধিকার সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। শুধুমাত্র পরোক্ষভাবে পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া নয়, যুবদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট এসডিজি সম্পর্কিত এবং যুব-ভিত্তিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ।
সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আজহারুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এসডিজির জবাবদিহিতা এবং যুবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, যুব প্রশিক্ষণগুলোর যথাযথ প্রতিবেদন এবং প্রভাব বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে, তাই অ্যাকশন এইড এবং নাগরিকের প্ল্যাটফর্মের মত অন্যান্য সংস্থাকে সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।
Advertisement
সংলাপে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) হেড অব এক্সপেরিমেন্টেশন ড. রমিজ উদ্দিন, গভর্নেস ক্লাস্টার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রজেক্ট অফিসার মাহমুদ হাসান, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নাজমুল আহসান, ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডিওয়াইডিএফ) সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক অমিয় প্রাপন চক্রবর্ত্তী (অর্ক), বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) প্রেসিডেন্ট এজাজ আহমেদ এবং ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ফর সাস্টেনিবিলিটি (ইয়েস)-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ প্রমুখ।
সংলাপের শুরুতে বক্তব্য রাখেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ ভিএনআর-এ এসডিজি বাস্তবায়নের প্রগতি তুলে ধরলেও পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী ও যুব সমাজকে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়া যুবকদের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা দরকার।
সমাপনী বক্তব্যে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যুব কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার জন্য কাজ করতে হবে। তিনি স্থানীয়ভাবে যুবকদের ক্ষমতায়ন করার ক্ষেত্রে তথ্য ও উপাত্তের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
এমএএস/জেডএইচ/এমএস