গাজায় বসবাস করে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। এই এলাকা দৈর্ঘ্যে ৪১ কিলোমিটার আর প্রস্থে ১০ কিলোমিটার। এর চারপাশ ঘিরে আছে ভূমধ্যসাগর, ইসরায়েল আর মিসর।
Advertisement
অবরুদ্ধ গাজায় টানা ১১ দিন ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে তীব্র লড়াই চলার পর আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই লড়াইয়ের তীব্রতার কারণে জাতিসংঘ ‘পুরো মাত্রার যুদ্ধ বাধার’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
শুুরুতে গাজা ছিল মিসর অধিকৃত। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় ইসরায়েল গাজার দখল নেয়। পরে ২০০৫ সালে ইসরায়েল সেখান থেকে তাদের সৈন্য এবং প্রায় ৭ হাজার বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয়।
গাজা এখন নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। ২০০৭ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ফিলিস্তিনি প্রশাসনের ভেতর চরম মতভেদের পর হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়।
Advertisement
এরপর থেকে ইসরায়েল এবং মিসর গাজার ভেতর থেকে মালামাল এবং মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাদের দাবি, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসাবে এই বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটা স্বল্পস্থায়ী লড়াই হয়েছিল ২০১৪ সালে। আর চলতি বছর মে মাসে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংস লড়াই তীব্র মাত্রা নিয়েছে।
অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বাড়ার পটভূমিতে গাজায় সর্বসাম্প্রতিক ১১দিনের রক্তক্ষয়ী এই লড়াই শুরু হয়। এর জেরে সংঘর্ষ হয়েছে শহরে মুসলিম ও ইহুদিদের পবিত্র স্থানে।
হামাস ইসরায়েলকে সেখান থেকে সরে যাবার হুঁশিয়ারি দেবার পর ১০ মে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ শুরু করলে ইসরায়েল পাল্টা বিমান হামলা চালায়। দুই পক্ষের লড়াই এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, দ্রুত সহিংসতার মাত্রা ২০১৪ সালে ইসরায়েল ও গাজার লড়াইকে ছাপিয়ে যায়। এমনিতেই গাজার বাসিন্দারা নানা ধরনের সমস্যায় রয়েছে তার মধ্যে দু’পক্ষের এই সংঘাতে সাধারণ মানুষের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। সংঘাতের পর থেকে গাজাবাসী যেসব সমস্যায় দিন কাটাচ্ছে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো-
Advertisement
তীব্র বিদ্যুৎ সঙ্কটগাজায় সাধারণ সময়েই প্রায় প্রতিদিনই বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা গেছে। এই লড়াই শুরু হবার আগে গাজার বিভিন্ন বাড়িতে পালা করে প্রতিদিন মাত্র আট ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ দেয়া হতো।
সাম্প্রতিক লড়াইয়ে বিদ্যুতের লাইনগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এবং দেখা দিয়েছে তীব্র জ্বালানি সঙ্কট। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সমন্বয়কারী দফতর (ওচা) বলছে, এখন বেশিরভাগ বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ আসছে দিনে মাত্র তিন-চার ঘন্টা করে। কোথাও কোথাও তাও পাওয়া যাচ্ছে না।
গাজা ভূখন্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটা বড় অংশ আসে ইসরায়েল থেকে। খুব নগণ্য একটা অংশ উৎপাদিত হয় গাজার একটি মাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আর সামান্য অংশ সরবরাহ করে মিসর।
গাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং মানুষের বাসাবাড়িতে যে জেনারেটর আছে তার জন্য নির্ভর করতে হয় ডিজেল জ্বালানির ওপর। কিন্তু ইসরায়েল হয়ে যে জ্বালানি গাজায় আসে তা প্রায়ই বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সাধারণ সময়েও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। লড়াইয়ের ফলে তা এখন আরও তীব্র হয়েছে।
সীমান্ত পারাপারের সমস্যাগাজা থেকে চলাচলের ক্ষেত্রে রয়েছে বড় ধরনের সমস্যা। হামাস ২০০৭ সালে গাজায় ক্ষমতা গ্রহণের পর মিসর গাজার সাথে তাদের সীমান্ত মূলত বন্ধই করে রেখেছে। গত বছর করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য সীমান্তে আরও বাড়তি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মিসরে যাতায়াতের জন্য রাফা সীমান্ত চৌকি এবং ইসরায়েলে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য এরেজ সীমান্ত পারাপার চৌকি দু’টোই ২০২০ সালে প্রায় ২৪০ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয় এবং খোলা হয় মাত্র ১২৫ দিনের জন্য। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ ২০১৯ সালে দক্ষিণের রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজা থেকে বাইরে বেরিয়েছিলেন কিন্তু ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজারে।
উত্তরের এরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে যাতায়াতের সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে কমে গেছে ২০২০ সালে- যার কারণ আংশিকভাবে ছিল করোনাভাইরাস ঠেকাতে জারি করা বিধি-নিষেধ।
চলতি বছর এরেজ সীমান্ত চৌকি দিয়ে গাজা থেকে বের হতে পেরেছেন মাত্র প্রায় ৮ হাজার মানুষ। এদের বেশিরভাগই ছিলেন চিকিৎসা নিতে ইসরায়েলে যাওয়া মানুষ অথবা রোগীর সাথে যাওয়া আত্মীয়স্বজন বা তাদের নিকটজন।
সাম্প্রতিক এই লড়াই শুরু হবার আগে এই সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছিল। ত্রাণবাহী কিছু গাড়ির বহরকে যাতায়াতের অনুমতি দেয়া হচ্ছিল। এছাড়া সীমান্ত মূলত বন্ধই করে দেয়া হয়।
সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে হামলাজাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ বিদেশি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় দশ লাখ মানুষ খাবার জন্য দৈনন্দিন খাদ্য সহায়তার মুখাপেক্ষী।
যাতায়াতের ওপর ইসরায়েল অবরোধ জারি করার ফলে গাজা থেকে ঢোকা ও বের হওয়া মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য করার সুযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অবরোধের বেড়াজাল ডিঙাতে হামাস সুড়ঙ্গ পথের নেটওয়ার্ক তৈরি করে যার মাধ্যমে গাজা ভূখন্ডে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসা হতো।
এই সুড়ঙ্গ থেকেই হামাস তাদের গুপ্ত কমান্ড কেন্দ্রও পরিচালনা করে। ইসরায়েল বলছে, জঙ্গীরা এই টানেল বা সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহার করে চোখের আড়ালে ঘোরাফেরা করে। ফলে এই সুড়ঙ্গপথগুলো ধ্বংস করতে তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। ফলে খাদ্য সরবরাহের চোরা পথও বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসও স্থানীয় অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, গাজা এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় সবে মাত্র কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল। ফলে এই লড়াই সেই ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বড় ধরনের একটা ধাক্কা দিয়েছে।
বসবাসও গাজার বাসিন্দাদের জন্য কঠিন সমস্যাগাজা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় আটটি শিবিরে গাদাগাদি করে বাস করেন প্রায় ৬ লাখ শরণার্থী।
সাধারণত এক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে বসবাস করেন ৫ হাজার ৭শ’র বেশি মানুষ- যে পরিসংখ্যান লন্ডনের জনঘনত্বের কাছাকাছি। কিন্তু গাজা সিটিতে এক বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ৯ হাজারের অধিক মানুষ।
গাজা থেকে রকেট হামলা ও লোকজনের অনুপ্রবেশ থেকে সুরক্ষার জন্য ইসরায়েল ২০১৪ সালে একটি বাফার জোন ঘোষণা করে। ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে বেশ বিস্তীর্ণ এই এলাকা তারা গড়ে তোলে যাতে গাজা থেকে চালানো কোনরকম হামলা থেকে তাদের দেশ নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারে।
কিন্তু এই বিস্তীর্ণ এলাকা বাফার জোনের অংশ করে নেওয়ায় স্থানীয় মানুষদের থাকার এবং কৃষিকাজের জন্য জমি অনেকটাই কমে গেছে।
জাতিসংঘের হিসাব বলছে, ২০১৪ সালের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত হয়েছিল ১ লাখ ৪০ হাজার বসতবাড়ি। প্রায় ৯০ হাজার মানুষকে তাদের বসতবাড়ি আবার নির্মাণ করার কাজে তারা সহায়তা দিয়েছিল।
ওচা বলছে এখন সাম্প্রতিক এই যুদ্ধের কারণে কয়েকশ বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। অনেক বাড়ি মাটিতে মিশে গেছে। তারা বলছে, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে বেশ সময় লেগে যাবে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপের মুখেগাজার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নানা কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ সংস্থা ওচা বলছে, ইসরায়েল ও মিসরের দিক থেকে অবরোধ, পশ্চিম তীর কেন্দ্রিক ফিলিস্তিনি প্রশাসনের গাজার জন্য অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য বরাদ্দ এবং ফিলিস্তিনি প্রশাসনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েন সবই গাজার করুণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দায়ী।
জাতিসংঘ গাজায় ২২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালায়। ইসরায়েলের সাথে পূর্ববর্তী সংঘাতের সময়ই গাজার বেশ কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
গাজার কোন রোগীর যদি পশ্চিম তীর বা পূর্ব জেরুসালেমের হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার দরকার হয়, তাহলে তাকে আগে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করে তার জন্য অনুমোদন নিতে হবে। তারপর ইসরায়েল সরকারের কাছে গাজা থেকে বের হওয়ার জন্য পাস যোগাড় করতে হবে। ২০১৯ সালে গাজা ভূখন্ড থেকে চিকিৎসার জন্য আসা আবেদন অনুমোদনের হার ছিল ৬৫ শতাংশ।
গত কয়েক মাসে করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রীতিমত প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। গত এপ্রিলে গাজায় প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। মহামারি শুরু হবার পর থেকে গাজায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৪ হাজার। আর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মারা গেছে ৯৪৬ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ার করেছে যে, গাজা ইসরায়েল সীমান্তে বিধিনিষেধের কারণে শত্রুতার শিকার রোগীরা প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তো হচ্ছেই, এই প্রাণঘাতী ভাইরাস মোকাবিলার কাজও এর কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এর কারণে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় মানুষজন যুদ্ধের কারণে এখন আপদকালীন বাসস্থানে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়ায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
খাবার ও জীবিকার সঙ্কটজাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় ১০ লাখের ওপর মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে শ্রেণিভুক্ত। যদিও সেখানে প্রচুর মানুষ কোন না কোন ধরনের খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকে।
ত্রাণের খাদ্যবাহী গাড়ির বহর যাবার জন্য সীমান্ত পারাপারের চৌকিগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোলাবর্ষণের কারণে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
গাজার মানুষের কৃষিকাজ ও মাছ ধরার ওপর ইসরায়েল যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে তার ফলে গাজার বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার উৎপাদন করতেও অক্ষম।
ইসরায়েল ঘোষিত বাফার জোন এলাকায় গাজার মানুষ চাষবাস করতে পারেন না। এই এলাকা সীমান্তে গাজার দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এর কারণে গাজায় বছরে আনুমানিক ৭৫ হাজার টন কম ফসল উৎপাদিত হয়।
ইসরায়েল গাজা জন্য মাছ ধরার ক্ষেত্রেও সীমানা বেঁধে দিয়েছে। গাজার বাসিন্দাদের উপকূল থেকে মাত্র কিছু দূর পর্যন্ত মাছ ধরার অনুমতি আছে। জাতিসংঘ বলছে, এই বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে মাছ ধরে গাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারত এবং এলাকার মানুষ সস্তায় প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার সুযোগ পেত।
১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ইসরায়েল গাজা ভূখন্ড থেকে কোনরকম মাছ ধরার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে ইসরায়েল বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরার এলাকার সীমানা বিভিন্নভাবে বদলেছে। ফলে গাজার প্রায় ৫ হাজার জেলে ও মৎস্য খাতে সংশ্লিষ্টদের রুজিরোজগারে বড়ধরনের বিঘ্ন তৈরি হয়েছে।
পানির নিত্য সঙ্কটগাজার বেশিরভাগ মানুষ পানি সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে। কলের পানি লবণাক্ত এবং দূষিত হওয়ায় তা পানের উপযোগী নয়। গাজার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের বাসায় পাইপ লাইনে পানির সংযোগ থাকলেও ওচা বলছে, পরিবারগুলো পানি পায় অনিয়মিতভাবে। ২০১৭ সালে পরিবারগুলো কলের পানি পেত প্রতি চারদিন অন্তর মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘন্টার জন্য। এর কারণ ছিল পানি পাম্প করার জন্য বিদ্যুতের অভাব।
সর্বসাম্প্রতিক এই লড়াইয়ের ফলে এই সমস্যা আরও সঙ্গিন হয়েছে। পানির সরবরাহ আরও কমে গেছে বিদ্যুতের অভাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তারা মাথা পিছু প্রতিদিন ১শ লিটার পানির নূন্যতম একটা বরাদ্দ বেধে দিয়েছিল। এই বরাদ্দ ছিল খাওয়া, রান্না ও গোসল করার প্রয়োজন মেটানোর জন্য নূন্যতম বরাদ্দ। গাজায় পানি ব্যবহারের প্রয়োজনীয় গড় পরিমাণ মাথা পিছু প্রায় ৮৮ লিটার।
সেখানে পয়ঃনিষ্কাশনও আরেকটা বড় সমস্যা। ৭৮ শতাংশ বাসাবাড়ি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থাকলেও বর্তমান ব্যবস্থা তা সামাল দিতে অক্ষম। ওচা বলছে, প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার অপরিশোধিত অথবা আংশিক পরিশোধিত বর্জ্য ভূমধ্যসাগরে গিয়ে পড়ছে। সমস্যা মোকাবেলার জন্য চলতি বছরের গোড়ার দিকে নতুন একটি বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট বসানো হয়েছে।
বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থাগাজার বহু শিশুই জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে লেখাপড়া করে। সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ স্কুলভবন এখন আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে পরিবারগুলো এইসব স্কুলভবনে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা বলছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৭৫টি স্কুলের মধ্যে ৬৪ শতাংশ স্কুল এখন দুই শিফটে স্কুল চালাচ্ছে। এক শিফট সকালে আর এক শিফট বিকেলে চলে।
টিটিএন/এমএস