গণমাধ্যম

আদালতের ওপর আমাদের আস্থা ছিল : আনিসুল হক

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হক বলেছেন, ‘প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবসময়ই বলে এসেছি আমরা আইনের শাসনকে বিশ্বাস করি এবং আদালতের বিবেচনার ওপরে আমাদের আস্থা আছে। এর আগেও আমাদের পত্রিকার সম্পাদকের নামে মামলা হয়েছে, প্রত্যকবারেই আমরা আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পেয়েছি। এবারও রোজিনার ক্ষেত্রে যা হয়েছে তার প্রতিকার আদালতের মাধ্যমে চেয়েছি।’

Advertisement

রোববার (২৩ মে) দুপুরে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিনের আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাগো নিউজকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে আপনাদের যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আপনারা চালিয়েছেন সেজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রথমদিন থেকেই আপনারা পাশে ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং গণমাধ্যমকর্মীরা পরিশ্রম করেছেন, আমাদের পাশে ছিলেন।’

আনিসুল হক বলেন, ‘মূলত সংবাদপত্র সরকারের বন্ধু। সারা পৃথিবীতেই সংবাদপত্র ও সরকারের সম্পর্ক ভালো থাকে না। কিন্তু বলা হয় সমালোচকই আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। সরকারি কাজকর্মে, প্রশাসনে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভেতরে অনেক দুর্নীতি থাকতে পারে। আমাদের তথ্য অধিকার যে আইন হয়েছে তার ভূমিকাতেই বলা হয়েছে- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুশাসন নিশ্চিত করে, দুর্নীতি কমায়। জনগণের তথ্য জানার যে মৌলিক অধিকার সেটা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। সে হিসেবে আমরা সবসময়ই ন্যায়বিচার পাওয়ার আস্থা রাখি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এখন একটা ধাপ জামিন হলো। এরপর রোজিনার বিষয়ে আইনানুগ প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব। আমি একজন নাগরিক, লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে দাবি করব, মামলাটি নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া হোক। মামলার বিষয়ে টকশোতে, ব্যারিস্টাররা এবং আইনজীবীরা যা বলেছেন মামলাটির কোনো মেরিট নেই। তাই যদি হয়ে থাকে অযথা হয়রানি চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। সারাদেশের সাংবাদিকদের প্রশাসনের মুখোমুখি করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’

‘আমি নিজে একজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক, বাক স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক, তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষেরলোক। সেই হিসেবে পরামর্শ দেব বিষয়টি জটিল না করে এখনই ফয়সালা হোক এবং মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হোক।’

প্রথম আলো মামলা করবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘রোজিনার জামিন হওয়ার পরে তার সঙ্গে এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিষয়টি আবেগের নয়, আইনের বিষয়। সব পরামর্শ আইনজীবীদের নিয়ে আমাদের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের এবং দেশের বাইরে বিবেকবান মানুষ, নাগরিক, ও সাংবাদিকরা যে ঐক্য ও সংঘতি দেখিয়েছেন তা অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু রোজিনার ক্ষেত্রে নয়, এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাগরিকের অধিকার, নাগরিকের মোবাইল ফোন নিজের কাছে রাখার অধিকার। আমার মোবাইল ফোন আপনি কেড়ে নিতে পারেন না। আদালতের মাধ্যমে বিশেষ ওয়ারেন্ট জারি করে মোবাইল ফোন নিতে পারে। কিন্তু আমার শরীর তল্লাশি করতে পারেন না। আমাদের নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে যেন নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, এটি আমাদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। আর এই সংবিধান ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি।’

Advertisement

টিটি/ইএ/জিকেএস