জাতীয়

কয়েল ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

অনুমোদনহীন বেশকিছু কারখানায় তৈরি ও বিদেশ থেকে আমদানি করা মশার কয়েলে মাত্রাতিরিক্ত ‘অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’র ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ নিয়ে তদারকি নেই সংশ্লিষ্টদের। অন্যদিকে ক্রেতারা অজান্তেই সুরক্ষিত থাকার নামে কিনছেন ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি! জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অননুমোদিত কয়েলে ‘অ্যাকটিভ ইনটিগ্রেডিয়েন্ট’ যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ বিকলাঙ্গতার মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুও এর ক্ষতির শিকার হতে পারে। খাদ্যে ফরমালিন ও পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব যেমন দীর্ঘমেয়াদী, তেমনি এসব কয়েলের বিষাক্ত উপাদান মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগের বাসা তৈরি করছে।রোগতত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, এ ধরনের রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার সব বয়সী মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। তবে শিশুদের উপর এটি দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে। তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত এ ধরণের রাসায়নিকের সংস্পর্শ তাৎক্ষণিকভাবে নয়, সূদূরপ্রসারী ক্ষতি করে। জটিল রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে মারাত্মকভাবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থ্যা (ডব্লিউএইচও) মশার কয়েলে সর্বোচ্চ দশমিক ০৩ মাত্রার ‘অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ ব্যবহার নির্ধারণ করেছে। এই মাত্রা শুধুমাত্র মশা তাড়াতে কার্যকর, মারতে নয়। তবে বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। অনুমোদনহীন ব্যবসায়ীমহল কর্তৃক প্রস্তুত ও বাজারজাতকৃত কয়েলে শুধু মশাই নয়, বিভিন্ন পোকামাকড়, তেলাপোকা এমনকি টিকটিকি পর্যন্ত মারা যায়। অন্যদিকে, বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আমদানি করা কয়েলে বিশেষ করে চায়না কয়েলে মাত্রাতিরিক্ত ‘একটিভ ইনটিগ্রেডিয়েন্ট’ এর সন্ধান মিলেছে। সূত্র জানায়, চায়না কয়েল আমদানির অনুমোদন নেই। বিদ্যমান বালাইনাশক অধ্যাদেশ (পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্স ১৯৭১ ও পেস্টিসাইড রুলস ১৯৮৫) অনুসারে, মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অধ্যাদেশ অনুযায়ী অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর পাবলিক হেলথ প্রোডাক্ট (পিএইচপি) নম্বর ও বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়েই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বালাইনাশক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মারাত্মক ক্ষতিকর কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ২০/২২টি দেশীয় বেনামি কারখানা। ভুয়া পিএইচপি নম্বর ও বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করে আকর্ষণীয় মোড়কে এসব কয়েল বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা উচ্চমাত্রার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টে সম্পন্ন চায়না কয়েল। দেশের বাজার এসব কয়েলে সয়লাব হলেও এর বিপরীতে সংশ্লিষ্টদের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ অনুমোদিত দেশীয় কোম্পানিগুলোর। অন্যদিকে, মাত্রাতিরিক্ত ‘একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ সমৃদ্ধ কয়েলের কার্যকারিতা বাজারের প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড যেমন এসিআই, মরটিনের চেয়ে অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতারা এসব অননুমোদিত কয়েলের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।জেইউ/এএইচ/এমএস

Advertisement