বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের নিয়োগে সুপারিশের রায় বাস্তবায়ন না করায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে করা আবেদনের ওপর শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে আজ।
Advertisement
আজ (রোববার) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় দেড় হাজার চাকরিপ্রার্থীকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশের জন্য বেঁধে দেয়া ৭ কার্যদিবসের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে সুপারিশের অগ্রগতি হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার বিষয়ে শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। ওই দিন এই আবেদনের ওপর শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য থাকলেও শুনানি হয়নি। এ কারণে আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
আইনজীবী সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জানান, নির্ধারিত দিনে আদালতের কার্যতালিকায় মামলার সংখ্যা বেশি থাকায় শুনানি পিছিয়ে আজ রোববার (২৩ মে) নতুন দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আদালতে ওইদিন আবেদনকারী শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া ও ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। রিটে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন ও অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভূইয়া।
এর আগে গত ৬ মে হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ এনটিআরসিএ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় দেড় হাজার চাকরিপ্রত্যাশীকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য ৭ দিন সময় দিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে গত ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার নিবন্ধনধারীকে নিয়োগ দিয়ে এনটিআরসিএ’র জারি করা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত এবং নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম এ সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখারও আদেশ দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি শুনানি হয়।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া সেদিন বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী প্রায় দেড় হাজার জনকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন আদালত।
Advertisement
একই সঙ্গে গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি এ সময়ের জন্য স্থগিত করেছিলেন আদালত। আজ সেটা শুনানির জন্য ধার্য ছিল। শুনানির নির্ধারিত দিনে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ অগ্রগতি দাখিল করবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
এর আগে ৭ মার্চ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
একই সঙ্গে নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে বলেন আদালত। আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন না করায় পুনরায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএ কোনো বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
আইনজীবী ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন মো. হানিফ বলেন, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছেন। ওই রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল সম্মিলিত মেধা তালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারীদের জন্য সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ।
কিন্তু অনেক সময় পার হলেও রায় বাস্তবায়ন না করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের মধ্যে রিটকারী প্রায় দেড় হাজার জনকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি সাত দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য আজ (১৮ মে) দিন ধার্য করেন। ওইদিন শুনানি শেষে সেটি আরো শুনানি ও অগ্রগতি প্রতিবেদন জমার দেওয়ার জন্যে ২০ মে দিন ঠিক করেন।
হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করাসহ ৭ দফা নির্দেশনা দেন। ওই রায়ে বলা হয়, এনটিআরসিএ নিয়োগের উদ্দেশ্যে যদি কোনো সুপারিশ করে তবে তা ৬০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সনদধারীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদ বহাল থাকবে। কিন্তু এনটিআরসি কর্তৃপক্ষ এ রায় বাস্তবায়ন না করেই তৃতীয়দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার আবেদন করেন।
এফএইচ/এমএইচআর/জেআইএম