দেশজুড়ে

ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় মানুষের আশ্রয় হবে ‘মুজিব কিল্লায়’

পটুয়াখালীসহ উপকূলের মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয়। প্রতি বছরই উপকূলে আঘাত হানছে ছোটবড় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা বন্যা। সে সময়ে আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করেন সবাই।

Advertisement

সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে মানুষের আশ্রয়ের সুযোগ হলেও গবাদিপশু পাখিরা থাকে অরক্ষিত। এ কারণে অনেকেই পোষা প্রাণির মায়ায় ঝুঁকি নিয়েই বাড়িতে অবস্থান করেন। ফলে বাড়ে হতাহতের ঘটনা। তবে উপকূলে এবার চালু হচ্ছে মানুষ এবং পশু পাখিদের আশ্রয়ের জন্য মুজিব কিল্লা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের নেওয়াপাড়ায় এবং টিয়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব টিয়াখালী গ্রামে নির্মিত দুটি মুজিব কিল্লা রোববার (২৩ মে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও ১০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছেন,মুজিব কিল্লা নির্মাণের ফলে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ দুর্যোগকালে উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুশ্চিন্তা লাঘব হবে।

Advertisement

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিত সরকার বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার হাত থেকে জানমাল রক্ষার্থে অনেকগুলো মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই এগুলো ‘মুজিব কিল্লা’ নামেই এলাকার সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নির্মিত সেই কিল্লাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু কিছু এলাকার কিল্লা এবং তৎসংলগ্ন জমি বেদখল হয়ে যায়। এসব কিল্লার সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘মুজিব কেল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় জেলায় মোট ৫২টি মুজিব কিল্লা নির্মিত হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘এ’ এবং ‘বি’ দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে মুজিব কিল্লা নির্মিত হচ্ছে। এ-তে ছয় হাজার বর্গফুট এবং বি-তে আট হাজার বর্গফুট আয়তন থাকছে। তবে এ-তে পুরো কিল্লার ওপরের এবং নিচের অংশ মিলিয়ে আয়তন হচ্ছে ৪২ হাজার ২২০ বর্গফুট। বি-তে ওপর-নিচ মিলিয়ে আয়তন হচ্ছে ৫০ হাজার ৪০০ বর্গফুট। এ-তে নির্মিত একতলা বিশিষ্ট অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২০ ফুট এবং প্রস্থ হচ্ছে ৫০ ফুট। বি-তে একতলা বিশিষ্ট অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ ৫০ ফুট ৬ ইঞ্চি।

প্রতিটি কিল্লার মাটি থেকে উচ্চতা রাখা হয়েছে ১১ ফুট। এ এবং বি-তে গরু-বাছুর রাখার জন্য ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫০ ফুট প্রস্থের ‘ক্যাটল শেড’ রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও কিল্লার ওপর নির্মিত অবকাঠামোর এক পাশে নারী এবং অপর পাশে পুরুষের থাকার জন্য নির্দিষ্ট করে জায়গা রাখা হয়েছে। সোলারসহ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বসবাসকারীদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য কিল্লায় নির্মিত অবকাঠামোতে ১৮টি সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিটিতে আটটি শৌচাগার, আশ্রয়কালে রান্না করে খাওয়ার জন্য অবকাঠামোর দুপাশে দুটি রান্নার ঘর করা হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। ছোট কিল্লার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বড় কিল্লার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

Advertisement

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার এখন সারা বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল। মুজিব কিল্লাগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন ও সম্পদ হানির পরিমাণ কমে আসবে। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে জেলার দুটি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন এবং ১০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তি ফলক উন্মোচন করবেন। এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

এসজে