গণমাধ্যম

সংসদে প্রবেশের সময় একের পর এক সাংবাদিক লাঞ্ছিত

জাতীয় সংসদে প্রবেশের সময় একের পর এক সাংবাদিক লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া চলতি সংসদের ৮ম অধিবেশনের শুরু থেকেই সংসদ ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অজুহাতে নানানভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে স্পিকারের দুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না দায়িত্বরত ‘কর্তা-ব্যক্তিরা’। সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরো বেশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস।সর্বশেষ বুধবার দুপুরে সেখানে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বিডিনিউজের এবং পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক সাজিদুল হক সাজু। এ বিষয়ে সাজিদুল হক সাজু সাংবাদিকদের বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিদিনের মত সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি চেক ব্যাগ স্ক্যান, মোবাইল-মানিব্যাগ আলাদা ঝুঁড়িতে রেখে প্রবেশ করি। এরপর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন সদস্য আমাকে বলেন দুটি মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তখন আমি বলেছি সাংবাদিকদের জন্য দুটি মোবাইল নিয়ে প্রবেশের অনুমতি আছে। কিন্তু তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অনুমতি সম্পর্কে তার জানা নেই। তাই আমি প্রবেশ করতে পারবো না। এরপর বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নিশ্চিত হতে উনাকে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি তাও করতে চান না। এ সময় তিনি বলেন, কিসের সাংবাদিক, এরপর নানান অঙ্গভঙ্গি করে আমাকে লাঞ্ছিত করেন। সাজু বলেন, এরপর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অপর এক পরিচিত নিরাপত্তাকর্মী আমাকে ভেতরে নিয়ে যান। এদিকে সংসদের ৮ম অধিবেশনে সাংবাদিকরা প্রবেশের ক্ষেত্রে নানানভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। নিরাপত্তায় থাকা এসবির সদস্যরা নানান অজুহাতে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের আইডি কার্ড রেখে দেয় এবং তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এসব বিষয়ে জাতীয় সংসদের নিরাপত্তা বিভাগে সাংবাদিকরা অভিযোগ জানালেও তা কর্ণপাত করেন না দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমোডোর এম আশরাফুল হক।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমোডর আশরাফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে অবগত নই। আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এখনো কেউ আসেননি।’ তবে সাজিদুল হক সাজু সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিজেই সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং যে নিরাপত্তাকর্মী আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন তাকেও চিনিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস বলেছেন, লিখিতভাবে জানাতে।এর আগে সদ্য শেষ হওয়া অধিবেশনে বেশ কয়েকজন পত্রিকা, অনলাইন ও টেলিভিশন সাংবাদিকের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী দুর্ব্যবহার করেন। একজন সাংবাদিক জানান, ‘অষ্টম অধিবেশনে প্রবেশ করতে গেলে স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন নিরাপত্তাকর্মী আমাকে বলেন, আপনি সাংবাদিক। তাইলে তো বেশি করে চেক করতে হবে।’ এরপর  তিন দফায় চেক করেন।নিরাপত্তার নামে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে জানতে ওই সময় কমোডর আশরাফুল হকের কাছে গেলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদে প্রবেশের সময় দায়িত্বরত কর্তা-ব্যক্তিদের আচরণ অপেশাদার। তারা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই দায়িত্ব পালনে বসে যান। তাই কেউ কেউ অধিবেশন কভার করার তথ্য অধিদফতরের পাস চেনেন না। আর কেউ কেউ তথ্য অধিদফতরের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড চেনেন না। এসব কার্ড দেখালে নানান ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। শরীর তল্লাশির নামে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত রাখেন। আবার দায়িত্বপালনের সময় দলগতভাবে আড্ডা দেন তারা। গেট পেরিয়ে গেলে তারা দর্শনার্থীদের নিদের্শের সুরে কাছে ডাকতে থাকেন। অধিকাংশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকই অভদ্রভাবে কথা-বার্তা বলেন। আবার পরে প্রবেশের নির্দেশ দিয়ে কোনো কোনো সাংবাদিককে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন তারা। এইচএস/এসএইচএস/এমএস

Advertisement