প্রবাস

দিবস আছে, থেমে নেই জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতি মিলিয়েই আমাদের পৃথিবী। মানুষ এটিকে নির্দয়ভাবে ও নির্বিচারে ব্যবহার করছে, ফলে বিশ্ব ব্যবস্থাই আজ হুমকির মুখে। জীব-বৈচিত্র্য বিশ্ব পরিবেশের এক অনন্য উপকারী সত্ত্বা। বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীব-বৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক জীব-বৈচিত্র্য দিবস পালিত হয় ১৯৯২ সালের ২২ মে থেকে। অথচ মানুষ এখনো এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠতে পারেনি। প্রতিনিয়ত মানুষ জীব-বৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে গাছ কাটার মতো জঘন্য কাজ করে।জীব-বৈচিত্র্য হলো পৃথিবীতে জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনশীলতা।

অধ্যাপক হ্যামিল্টনের মতে, পৃথিবীর মাটি, পানি ও বায়ুতে বসবাসকারী সব উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত (বাস্তুতান্ত্রিক) বৈচিত্র্য দেখা যায় তাকেই জীববৈচিত্র্য বলে।

মার্কিন জীব বিজ্ঞানী ই.এ. নরসে এবং তার সহযোগীদের সূত্ৰ অনুযায়ী জৈব বৈচিত্ৰ্য হলো- জল, স্থল সকল জায়গায় সকল পরিবেশে থাকা সকল ধরনের জীব এবং উদ্ভিদের বিচিত্ৰতা।

Advertisement

পৃথিবীর ১০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ অংশতেই ৫০ মিলিয়ন প্ৰজাতির বিভিন্ন জীব-জন্তু এবং উদ্ভিদের বসবাস। আজ ২২ মে বিশ্ব জীব-বৈচিত্র্য দিবস। দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হলো- জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে পৃথিবীব্যাপী সচেতনতা। অথচ পৃথিবী দিনে দিনে রোবোটিক হয়ে ওঠছে। এদিকে মানুষ বংশ বিস্তার করছে চক্রবৃদ্ধি হারে।

আরও পড়ুন>> পরিবার, এক বিস্ময়কর সাবলীল সত্য পাঠশালা

প্রতিনিয়ত খাবার ও বসবাসের জায়গা খুঁজছে মানুষ। বন জঙ্গল কেটে ফেলছে। নদীতে বাঁধ দিচ্ছে এবং বালু বা কংক্রিট দিয়ে মাটি ঢেকে দিচ্ছে। বিশুদ্ধতার সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে সবধরনের দূষণ। এমন ধ্বংসযজ্ঞ সবুজ গ্রহে দাঁড়িয়ে ১৯৯২ সালের ২২ মে রাষ্ট্র, সরকার ও পৃথিবীর বড় বড় সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ব্রাজিলের রিও-তে শীর্ষ ধরিত্রী সম্মেলন-এ জীব বৈচিত্র্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

মানুষের অমানবিকতা এবং অসচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়তই এ সমস্যা প্রকট রূপ ধারণ করছে। ফলে বিপণ্ন হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্যতা। বিশেষ করে শিল্পোন্নত ২০ দেশের উৎপাদিত ৮০ শতাংশ ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বনডাই অক্সাইড দিচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। 

Advertisement

যার ফলে প্রাণীজগতের টিকে থাকার স্ব স্ব পরিবেশ বিপণ্ন হয়ে পড়েছে। যানবাহনের জন্য ব্যাপকহারে জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত জীবন যাত্রার জন্য বন্য প্রাণীর আবাস উজাড় হচ্ছে।

এক তথ্য মতে, আমাদের দেশে সুন্দরবনসহ ৪০ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিপণ্ন। অতিবিপণ্ন বা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বন বিনাশ, পিটিয়ে মারা, শিকার, বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত, পর্যাপ্ত খাবার ও প্রাকৃতিক বন্যা, মহামারি, দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ও আশ্রয়ের অভাবে এসব প্রাণীর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। 

কিছুদিন আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্তোরাঁর প্রয়োজনে প্রাচীন গাছগুলো কাটা হলো যা চূড়ান্ত মানসিক অবক্ষয় না হলে সম্ভব নয়। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশেই গাছের মধ্যই গড়ে উঠেছে নান্দনিক রেস্তোরাঁ।

সুতরাং, জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয় একটি বৈশ্বিক। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা কোনো ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ নয়। প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে জীব বৈচিত্র্যের সম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীকে সুন্দর, পরিছন্ন ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করতে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশকে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাঁচতে হলে একযোগে কাজ করতে হবে।

এমআরএম/এসএস