দেশজুড়ে

পাকশী রেলওয়ের জমি দখল অব্যাহত

রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল কর্ম অব্যাহত রেখেছে এক শ্রেণির ভূমিগ্রাসী। এসব জায়গা থেকে কোনো রাজস্বও পাচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধভাবে দখল ও ব্যবহার করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষকে। এর সঙ্গে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টার ও বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহারের কারণে প্রতি বছরই রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমছে। অবৈধ দখলদাররা কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব প্রাপ্তিতে। সঙ্গে যোগ হয়েছে এসব জায়গায় বসবাসকারীদের নানা রকমের বেআইনী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা। বৃদ্ধি পেয়েছে হত্যা, গুম, লুটপাট, মাদক ও অস্ত্রের ব্যবহার। সাম্প্রতিক সময়ে ঈশ্বরদীর সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হিসেবে এএসআই সুজাউল ইসলামকে হত্যা ও প্রকাশ্যে এক যুবকের হাত কেটে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে পাকশী এলাকায়। পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় অফিস ও ইপিজেডসহ নানা কারণে ঈশ্বরদীর অন্যসব ইউনিয়ন থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ পাকশী ইউনিয়ন। এখানে পাকশী পেপার মিল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে। পাকশীতে রেলওয়ের বিদ্যুৎ অবৈধ সংযোগ দিয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা বাণিজ্য করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ বিভাগের দুই-তিনজন কর্মচারী এসব কাজে জড়িত থাকায় রেলওয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বিদ্যুৎ প্রকৌশলী (ডিইই) অফিস সূত্র মতে, পাকশীতে মোট ৩৯১টি বৈধ মিটার রয়েছে। এই মিটারগুলোতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ইউনিট দেখানো হয়, তার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে। রেলওয়ের অনেক বাসায় অবৈধভাবে সাধারণ ব্যক্তিরা বসবাস করছে। আবার ইপিজেডের শ্রমিকরা রেলওয়ের জায়গাতে ঘরবাড়ি তুলে রেলওয়ের বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। তাদের প্রত্যেকের বাসাতে আবার মানুষ দেখানো পিডিবি লাইন সংযোগ নেয়া আছে। কিন্তু ব্যবহার করা হয় রেলওয়ের বিদ্যুৎ। পাইলট পাড়া, বাবুপাড়া, ঝাউতলা, এমএস কলোনি, মেরিন পাড়া, ব্র্যাক পাড়া, গালর্স স্কুলপাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি ও ইনস্টিটিউট কলোনিতে অনেক বাসায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। রেলওয়ের অধিকাংশ বাসায় এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকায় সেখান থেকেও আর্থিক কোনো সুবিধা রেলওয়ে পাচ্ছে না।অপরদিকে, পদ্মা নদীর গাইড বাঁধে সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে উঠেছে হঠাৎ পাড়া। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ও চিহিৃত চক্র রেলওয়ে জমি প্লট করে বহিরাগতদের কাছে বিক্রি করেছে। বহিরাগত ক্রেতারা দিনের পর দিন এসব জমি কিনে বাড়ি ঘর তৈরি করতে করতে এ এলাকার নাম এখন হঠাৎ পাড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই হঠাৎপাড়ায় বসবাস করছে প্রায় চার শতাধিক পরিবার। যাদের বেশির ভাগই নদী ভাঙ্গন এলাকা চিলমারি, গাংনী, মেহেরপুর থেকে আসা। যে যার মতো করে স্থাপন করেছে বসতি। সরকারি রেলওয়ে জায়গা বরাদ্দ (লিজ) না নিয়েই গড়ে তুলেছে এসব বসতি। আর তা হয়েছে কতিপয় কিছু অসাধু রাজনৈতিক পরিচয় দানকারী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এমন অভিযোগ স্থানীয় ব্যক্তিদের। রেলওয়ে জমি চাহিদা মতো অর্থ নিয়ে এসব ব্যক্তিদের দখল দিয়েছেন কতিপয় ব্যক্তি। সম্প্রতি বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভায় পাবনার জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার আলমগীর কবির আইন শৃঙ্খলার উন্নয়নের স্বার্থে এসব অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। সরকারি রাজস্ব আদায় ও আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নের স্বার্থে এবং পাকশীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রেলওয়ের সকল জায়গা উদ্ধার করা জরুরি। ঈশ্বরদী বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী(নির্বাহী) উৎপল কুমার সাহা অভিযোগ করে বলেন, যেখানে বৈধ গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারছি না, সেখানে সরকারি জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি। পাকশী বিভাগীয় অফিস ও অফিসার্স কলোনি সংলগ্ন রেলের জমিতে এ হঠাৎপাড়া গড়ে উঠায় অফিসাররা সব সময় পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটান। তাদের ধারণা, যেকোনো সময় চুরি ডাকাতি, খুন জখমসহ বড় ধরনের দুঘর্টনা ঘটতে পারে। এত কিছুর পরও জমি দখল অব্যাহত আছে বলে এলাকাবাসি জানান।অন্যদিকে, ১৮৮ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠা পাকশী পেপার মিলের প্রায় ৫০ একর কৃষি জমি দখল করে খাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। বিনা লিজে পেপার মিলের জমি প্রভাবশালীরা দখল করে বিভিন্ন মেয়াদে কৃষকদের কাছে চুক্তি ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পাকশী পেপার মিল কর্তৃপক্ষ রেলওয়ের কাছ থেকে ৫৪ দশমিক ৮৭ একর জমি পেপার মিলের নামে লিজ নেওয়া হলেও তা ভোগ করছেন দখলদাররা। প্রভাবশালীরা ওই জমি লিজ দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। পাকশী পেপার মিলের প্রধান হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্রে জানা যায়, পাকশী পেপার মিলের মোট জমির পরিমাণ ১৮৮ একর। নিজস্ব রয়েছে ১৩৩ দশমিক ৫৪ একর। কলোনি রয়েছে ৪০ দশমিক শুন্য এক একর। কারখানাসহ অন্যান্য ৯৩ দশমিক ৫৯ একর। রেলওয়ে থেকে পেপার মিলের নামে লিজ নেওয়া ৫৪ দশমিক ৮৭ এক। এর কিছু অংশ দখল করে খাচ্ছে দখলদাররা। এসব জমি উদ্ধার করার জন্য ইতোমধ্যে মিল কর্তৃপক্ষ একাধিক পত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করেছেন। জমি উদ্ধার করে ইজারা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। পাকশী রেলওয়েল বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি অফিসের একটি সূত্র জানায়, বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ করতে যেয়ে প্রভাবশালীদের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি মামলা-মোকদ্দমায় পড়ে হাজিরা দিতে বিভিন্ন আদালতে উপস্থিত হতে হচ্ছে। আলাউদ্দিন আহমেদ/এমজেড/এমএস

Advertisement