ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আগামী ২৬ মে সকালে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। এটি আঘাত হানতে পারে দিঘা ও শংকরপুরেও। এছাড়া উপকূলীয় তিন জেলা দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
Advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও নবান্নে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, একদিকে কোভিড দুর্যোগ অন্যদিকে কখনো আম্ফান কখনো সুনামি কখনো যশ। একটা সিরিয়াস দুর্যোগ আসছে। তার জন্য যা যা করার আমরা করেছি। সব জেলার জেলাশাসককে সতর্ক করা হয়েছে। সুন্দরবন ও দিঘার উপকূলবর্তী এলাকার কাছাকাছি সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। সরকার থেকে যা যা করার, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের থেকে যা যা করার সব করবে। আমি নিজে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আবারও করব।
সেই সঙ্গে আম্ফানে কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়েও সরব হন মমতা। তিনি বলেন, কেন্দ্র রাজ্যের পাওনা কিছু দেয়নি। একটা আম্ফান চলে গেছে। আরেকজন ‘টা টা’ ‘বাই বাই’ করে আকাশের উপর দিয়ে ঘুরে চলে গিয়েছেন ‘দেব’ বলে। আরেকটা আবার যশ আসছে। তার জন্য আবার আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। প্রতিবছর একটা করে দুর্যোগ।
Advertisement
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, শনিবার (২২ মে) উত্তর আন্দামান সাগর এবং পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে, যা ২৪ মে নাগাদ ঘূর্ণিঝড় যশে পরিণত হবে। উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে তা ২৬ মে সকালের দিকে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দফদরের পূর্বাঞ্চলীয় কর্মকর্তা গণেশচন্দ্র দাস বলেন, নিম্নচাপই হোক কিংবা ঘূর্ণিঝড়, তাদেরকে প্রতিনিয়ত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। শনিবার উত্তর আন্দামান সাগর এবং পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে, যা ২৪ মে নাগাদ ঘূর্ণিঝড় যশে পরিণত হবে। এটি ২৬ মে বাংলা ও ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের জেলাগুলোতে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোনো কোনো জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে। আগামী ২৫ মে থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে এবং তা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে।
তবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমবে না। আগামী ২৩ মে আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের বেগ থাকতে পারে ঘণ্টা ৬৫ কিলোমিটার। কিন্তু তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হতে পারে ঘণ্টায় ৭০ কিমি বেগ। ২৪ মে এই বেগ সর্বোচ্চ হতে পারে ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার,যা হতে পারে মধ্য বঙ্গোপসাগরে। ২৫ মে গতিবেগ আরও বাড়বে।
Advertisement
অন্যদিকে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলে ২৫ মে বিকেলের দিকে গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। তবে ২৬ মে সকালের আগে গতিবেগ আরও বাড়বে।
আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করবে ২৩ মে। ২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে মধ্য বঙ্গোপসাগরের বড় অংশে ঢেউয়ের উচ্চতাও বেশি হবে। অন্যদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর-ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে সমুদ্র উত্তাল থাকবে ২৫-২৭ মের মধ্যে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ২৪ মে থেকে কেউ যেন গভীর সমুদ্রে না যায়। আর গভীর সমুদ্রে যারা যাচ্ছেন, তারা যেন ২৩ মের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসেন।
‘যশ’ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলার ২৫টি ব্লকের বিডিও, ব্লক দুর্যোগ ব্যবস্থাপন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপন দফতরের কর্তারা।
দিঘা, মন্দারমনি, রামনগর, নন্দীগ্রাম, হলদিয়ায় সমুদ্র এবং নদী উপকূলে রয়েছে। উপকূল এলাকার ৪৩টি মাল্টি পারপাস শেল্টারের পাশাপাশি সাড়ে চারশো স্কুলবাড়ি বিপদাপন্নদের আশ্রয় হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের পক্ষে বৈঠক করে জানানো হয়, ২৩ মের মধ্যে সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে। চাল, ডাল, ত্রিপল ও খাদ্যপণ্যও মজুত করতে বলা হয়েছে।
এমএসএইচ/জিকেএস