রাজধানীর পল্লবীতে শাহীন উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালকে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাব বলছে, ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি আউয়ালের কলাবাগান অফিসে ২ নম্বর আসামি আবু তাহের ও ৩ নম্বর আসামি সুমন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, পল্লবীতে সন্তানের সামনে বাবাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. আউয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কলাবাগান অফিসে আবু তাহের ও সুমন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সুমনকে। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন কিলিং মিশনে অংশ নেয়।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, র্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর অভিযানে বুধবার রাতে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকা থেকে হাসান (১৯), বৃহস্পতিবার রাতে ভৈরব সদর এলাকা থেকে মূলহোতা মো. আউয়াল (৫০) এবং বৃহস্পতিবার ভোরে পটুয়াখালীর বাউফল থেকে মো. জহিরুল ইসলাম বাবুকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়।
Advertisement
হত্যাকাণ্ড বর্ণনা দিয়ে র্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ মে সুমন, বাবুসহ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন পরামর্শ করে। সে অনুযায়ী ১৬ মে বিকেলে তারা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। এরপর তাদের ডাকে শাহীন উদ্দিন সন্তানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
মীমাংসার কথা বলে আগে থেকেই শাহীনকে ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়েছিল। প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহীনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ঘটনার শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে মানিক শাহীনের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এ সময় বাবুসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ‘লুকআউট ম্যান’ হিসেবে নজরদারি করে। হত্যাকাণ্ডটি ৫-৭ মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সাবেক এমপি আউয়ালের মোবাইলে ফোন করে সুমন বলে, ‘স্যার ফিনিশড।’
এরপর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাঢাকা দেয়।
Advertisement
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সাবেক এমপি আউয়াল একজন আবাসন ও জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রচ্ছায়ায় সুমনের সন্ত্রাসী গ্রুপ এলাকায় জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করত। এজন্য তারা মাসে ১০-১২ হাজার টাকা মাসোয়ারা এবং ক্ষেত্রবিশেষে কাজ অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা পেত। এই সন্ত্রাসী দলটি এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশার টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
শাহীন হত্যায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।
গত ১৬ মে বিকেল ৫টার দিকে মিরপুর-১২ নম্বর ডি-ব্লকে প্রকাশ্যে সন্তানের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শাহীনকে।
ওইদিন পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পল্লবীর ওই এলাকায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে শাহীনের আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ চলছিল।
টিটি/এসএস/জেআইএম